ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের প্রতিবাদে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে উত্তাল হয়েছে মরক্কো। দেশটির রাজধানী রাবাতে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হওয়া বিশাল বিক্ষোভ সমাবেশে হাজার হাজার মানুষ অংশ নেয়।
খবর অনুযায়ী, গত ১৮ মাস ধরে চলা এই যুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের উপর ইসরায়েলের আক্রমণ এবং এর প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা।
বিক্ষোভকারীরা ইসরায়েলি পতাকা পদদলিত করে এবং নিহত হামাস নেতাদের ছবি সম্বলিত ব্যানার বহন করে। এছাড়া, তারা ফিলিস্তিনিদের দুর্ভোগ এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতির সমালোচনা করে পোস্টার প্রদর্শন করেন।
বিক্ষোভকারীরা গাজায় ইসরায়েলি সামরিক অভিযানের নিন্দা জানান, যা ইতিমধ্যে ১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনির জীবন কেড়ে নিয়েছে এবং কয়েক লক্ষ মানুষকে বাস্তুচ্যুত করেছে।
সংবাদ সংস্থা এপির তথ্য অনুযায়ী, গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত ৫০,৭০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং ১,১৫,৩০০ জনের বেশি আহত হয়েছেন।
বিক্ষোভকারীরা ট্রাম্প প্রশাসনের একটি প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করেন। প্রস্তাবটিতে গাজা উপত্যকা পুনর্গঠনের জন্য ফিলিস্তিনিদের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
বিক্ষোভকারীরা মনে করেন, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ ফিলিস্তিনিদের জাতিগতভাবে নির্মূল করার শামিল।
শুধু মরক্কো নয়, প্রতিবেশী দেশগুলো যেমন তিউনিসিয়া ও ইয়েমেনেও ফিলিস্তিনের সমর্থনে বিক্ষোভ হয়েছে। এছাড়া, মরক্কোর বাণিজ্যিক কেন্দ্র কাসাব্লাঙ্কায়ও একই ধরনের প্রতিবাদ দেখা গেছে।
বিক্ষোভকারীরা বিশেষভাবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা মনে করেন, ট্রাম্প প্রশাসনের নীতি পূর্বসূরি জো বাইডেনের নীতিরই ধারাবাহিকতা।
বিক্ষোভকারীরা বাইডেন প্রশাসনের সমালোচনা করে বলেন, বাইডেন কিছু বিষয় গোপন করেছিলেন, কিন্তু ট্রাম্প তা প্রকাশ করেছেন।
মরক্কোর সাবেক রক্ষণশীল প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা আবদেলহাক এল আরাবি বলেন, যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ায় জনগণের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে।
তিনি আরও বলেন, ‘এটা কোনো যুদ্ধ নয়, গাজাকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে।’
বিক্ষোভে বিভিন্ন সংগঠন ও সাধারণ মানুষ অংশ নেয়। যদিও মরক্কো কর্তৃপক্ষ সাধারণত বিক্ষোভের অনুমতি দেয়, তবে বিদেশি দূতাবাসগুলোর বিরুদ্ধে অথবা রাজতন্ত্রের সমালোচনাকারীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
অনেক বিক্ষোভকারী ২০২০ সালে ইসরায়েলের সঙ্গে মরক্কোর সম্পর্ক স্বাভাবিক করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানান।
উল্লেখযোগ্য, তৎকালীন ট্রাম্প প্রশাসনের উদ্যোগে ‘আব্রাহাম চুক্তি’ স্বাক্ষরের মাধ্যমে সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন ও সুদানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে ইসরায়েল।
তবে, অনেক আরব দেশের মতো মরক্কোর জনগণের মধ্যেও ইসরায়েলের প্রতি তেমন সহানুভূতির মনোভাব দেখা যায় না।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা