মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য: বিশেষজ্ঞের পরামর্শে সুস্থ থাকুন, সচেতন হোন
বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের মস্তিষ্কের কার্যকারিতা কমে যাওয়ার একটা সম্ভাবনা থাকে। স্মৃতিশক্তি দুর্বল হওয়া বা মনোযোগের অভাবের মতো সমস্যাগুলো এর মধ্যে অন্যতম। তবে কিছু সহজ উপায় অবলম্বন করে মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো রাখা সম্ভব।
আসুন, কয়েকজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী সেরকম কিছু বিষয় জেনে নিই।
১. সামগ্রিক স্বাস্থ্য (General Health)-এর দিকে নজর দিন:
ডাঃ সুজান ও’সুলিভান (ন্যাশনাল হসপিটাল ফর নিউরোলজি অ্যান্ড নিউরোসার্জারি, লন্ডনের একজন নিউরোলজিস্ট) বলেন, “শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য যা গুরুত্বপূর্ণ, মস্তিষ্কের জন্যও তাই প্রযোজ্য।” পর্যাপ্ত ঘুম, স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ এবং নিয়মিত ব্যায়াম—এগুলো শরীরের মতো মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যকেও উন্নত করে।
২. ধূমপান ও অতিরিক্ত মদ্যপান পরিহার করুন:
ধূমপান মস্তিষ্কের জন্য খুবই ক্ষতিকর। অ্যালকোহল সেবনের ক্ষেত্রেও সতর্কতা প্রয়োজন।
অল্প পরিমাণে অ্যালকোহল সেবন হয়তো তেমন ক্ষতিকর নয়, তবে অতিরিক্ত মদ্যপান মস্তিষ্কের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে।
৩. নিয়মিত ব্যায়াম করুন:
নিয়মিত ব্যায়াম (Exercise) মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি মস্তিষ্কের রক্তনালীগুলোকে সচল রাখতে সাহায্য করে।
সপ্তাহে অন্তত ২-৩ দিন, ২০-৩০ মিনিটের জন্য এমন ব্যায়াম করুন যাতে আপনার সামান্য শ্বাসকষ্ট হয়, যেমন—হাঁটা, দৌড়ানো বা সাঁতার কাটা।
৪. ব্যালেন্স (Balance) বজায় রাখুন:
ডাঃ ফেই বেগেটি (অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোলজিস্ট ও নিউরোসায়েন্টিস্ট) বলেন, “প্রতি দশকে সক্রিয় থাকা মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য সহায়ক।” এক পায়ের উপর ভর দিয়ে দাঁড়ানো (Single-leg exercises)-র মতো ব্যায়াম করুন, যা বয়স্ককালে খুবই প্রয়োজনীয়।
এছাড়াও, এরোবিক ব্যায়াম (Aerobic exercise) মস্তিষ্কের জন্য উপকারী কিছু উপাদান তৈরি করে।
৫. স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করুন:
বিশেষজ্ঞরা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট (Antioxidants) এবং অসম্পৃক্ত ফ্যাট (Unsaturated fats) সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন। খাবারের তালিকায় বেশি পরিমাণে ফল, সবজি, শস্য এবং মাছ রাখুন।
ডাঃ বেগেটি, ভূমধ্যসাগরীয় খাদ্যাভ্যাস (Mediterranean diet)-এর কথা উল্লেখ করেন, যেখানে জলপাই তেল (Olive oil)-এর ব্যবহার বেশি।
রান্নার ক্ষেত্রে মাখনের পরিবর্তে জলপাই তেল ব্যবহার করা যেতে পারে। ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড (Omega-3 fatty acids) সমৃদ্ধ খাবার, যেমন—বিভিন্ন প্রকার মাছ, মস্তিষ্কের জন্য উপকারী।
৬. পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করুন ও ক্যাফিন (Caffeine) ত্যাগ করুন:
দিনের শুরু থেকে অন্তত ২ লিটার জল পান করুন। এটি মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।
অতিরিক্ত চা বা কফি পান করা থেকে বিরত থাকুন।
৭. ঘুমের প্রতি যত্ন নিন:
ডাঃ বেগেটির মতে, “ভালো ঘুম দিনের শুরুতেই শুরু হয়।” প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়া ও ঘুম থেকে ওঠার চেষ্টা করুন।
ঘুমের সময়সূচীতে বেশি পরিবর্তন আনবেন না।
৮. মানসিক চাপ (Stress) কমানোর চেষ্টা করুন:
মানসিক চাপ মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তাই মানসিক চাপ কমাতে চেষ্টা করুন।
প্রয়োজনে ধ্যান বা হালকা ব্যায়াম করতে পারেন।
৯. প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সচেতন হোন:
ডাঃ বেগেটির মতে, প্রযুক্তি আসক্তি (Addiction) নিয়ে উদ্বেগের কারণ নেই, তবে এর সঠিক ব্যবহার জরুরি।
সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে সময়সীমা নির্ধারণ করুন।
১০. সামাজিক সম্পর্ক বজায় রাখুন:
সামাজিক সম্পর্ক (Social connections) আমাদের মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। বন্ধু ও পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো এবং সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া মস্তিষ্কের জন্য উপকারী।
১১. শখ (Hobbies) তৈরি করুন:
নতুন কিছু শেখা বা শখের প্রতি মনোযোগ দেওয়া মস্তিষ্কের জন্য ভালো। নতুন কোনো বিষয়ে আগ্রহ তৈরি করুন এবং সেই বিষয়ে জ্ঞান অর্জনের চেষ্টা করুন।
১২. মস্তিষ্কের ব্যায়াম করুন:
নিয়মিতভাবে মস্তিষ্কের ব্যায়াম (Brain training) করা উচিত। নতুন শব্দ শেখা বা জটিল ধাঁধা সমাধান করা এক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে।
১৩. নতুন কিছু শিখুন:
নতুন কিছু শেখা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ায়। কোনো বাদ্যযন্ত্র বাজানো বা নতুন ভাষা শেখা মস্তিষ্কের জন্য ভালো।
১৪. শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তির যত্ন নিন:
শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তির দুর্বলতা (Hearing and vision problems) মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করতে পারে। তাই, শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তির সমস্যা হলে দ্রুত চিকিৎসা করান।
১৫. হেলমেট ব্যবহার করুন:
বাইক বা সাইকেল চালানোর সময় অবশ্যই হেলমেট (Helmet) ব্যবহার করুন। মাথায় আঘাত পেলে তা মস্তিষ্কের ক্ষতি করতে পারে।
১৬. স্বাভাবিক স্মৃতিভ্রংশতাকে (Memory loss) মেনে নিন:
বয়স বাড়ার সাথে সাথে স্মৃতিশক্তি কিছুটা দুর্বল হতে পারে। সামান্য ভুলে যাওয়াটা স্বাভাবিক।
এই বিষয়গুলো মেনে চললে আপনি আপনার মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পারবেন এবং সুস্থ জীবন যাপন করতে পারবেন।
তথ্য সূত্র: The Guardian