ছেলের মুক্তির জন্য মায়ের অনশন ধর্মঘটের ঘোষণা: মিশর জুড়ে চাঞ্চল্য!

কারাগারে বন্দী ব্রিটিশ-মিশরীয় মানবাধিকার কর্মী আলা আব্দেল-ফাত্তাহ’র মুক্তির দাবিতে ফের অনশন ধর্মঘটের হুমকি দিয়েছেন তাঁর মা। ৬৯ বছর বয়সী লাইলা সুয়েইফ জানিয়েছেন, ছেলের মুক্তি না হলে তিনি মাসের শেষ নাগাদ আবারও অনশন শুরু করবেন।

গত বছর ২৯শে সেপ্টেম্বর থেকে ১৫০ দিনব্যাপী অনশন ধর্মঘট পালন করার পর অসুস্থ হয়ে পড়লে লাইলাকে লন্ডনের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি তখন শুধুমাত্র ভেষজ চা, ব্ল্যাক কফি ও রিহাইড্রেশন সল্ট গ্রহণ করছিলেন।

হাসপাতালে চিকিৎসকেরা তাঁকে সতর্ক করে বলেছিলেন যে তাঁর জীবন সংশয়পূর্ণ। এমনকি তিনি মিশরের রাষ্ট্রদূতের কাছে তাঁর দুই মেয়ের মাধ্যমে একটি আবেদনও জানিয়েছিলেন, যাতে তাঁর মৃত্যুর পর কায়রোর কাছে তাঁর প্রয়াত স্বামীর কবরের পাশে তাঁকে দাফন করা হয়।

হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর লাইলা সুয়েইফ বলেন, “আমি শারীরিক দুর্বলতা অনুভব না করলেও একজন বিজ্ঞানী হিসেবে বুঝতে পারছিলাম আমার শরীরের অবস্থা গুরুতর। চিকিৎসকেরা আমার মেয়েদের বলেছিলেন, যেন কোনোভাবে আমাকে ঘুমোতে না দেওয়া হয়।”

অবশেষে চিকিৎসকদের পরামর্শে তিনি দিনে ৩০০ ক্যালোরির খাদ্য গ্রহণ করতে রাজি হন, যাতে তাঁর ছেলের মুক্তির বিষয়ে আলোচনা শুরু করা যায়। এর আগে, ২৮শে ফেব্রুয়ারি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেইর স্টারমার মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির সঙ্গে আলাপের মাধ্যমে ফাত্তাহ’র মুক্তির বিষয়টি উত্থাপন করেন।

রমজান মাস শেষ হওয়ার পরে, অর্থাৎ ৩০শে মার্চের মধ্যে ফাত্তাহ’র মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা এখনো রয়েছে। কারণ, এই সময়টিতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার একটা সম্ভবনা থাকে।

ফাত্তাহ ইতিমধ্যে তাঁর পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের মেয়াদ পূর্ণ করেছেন, কিন্তু তাঁর মামলার আগের আটকাদেশের সময়কে মিশরীয় কর্তৃপক্ষ বিবেচনায় না নেওয়ায় তিনি এখনও মুক্তি পাননি।

ছেলের মুক্তির বিষয়ে কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় লাইলা সুয়েইফ এখন হতাশ। তিনি বলেন, “আমি প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছি, দ্রুত কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন না হলে আমি আবারও অনশন শুরু করব।

আগামী ২৫ তারিখে আমি আমার মেডিকেল টিমের সঙ্গে দেখা করব এবং তাঁদের কাছ থেকে আমার শারীরিক অবস্থার সম্ভাব্য পরিণতি সম্পর্কে জানব। তবে, আমি মনে করি, সে বিষয়ে আমি অবগত আছি।”

লাইলার মেয়ে সানাও জানিয়েছেন, মায়ের শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে, তবে তাঁর মাংসপেশি দুর্বল এবং গ্লুকোজের মাত্রা কম।

স্টারমারের ফোন কলের পর থেকে ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তরের সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ কমে গেছে বলেও তিনি জানান।

এদিকে, মায়ের অসুস্থতার খবর শুনে ১লা ফেব্রুয়ারি থেকে কারাগারে অনশন শুরু করেছেন ফাত্তাহ নিজেও।

পরিবারের সদস্যরা সম্প্রতি তাঁর সঙ্গে দেখা করেছেন, কিন্তু তিনি তাঁর অবস্থানে অনড় রয়েছেন।

ফাত্তাহ ব্রিটিশ কূটনীতিকদের তাঁর সঙ্গে দেখা করার অনুমতি দেওয়ার জন্য আবেদন করেছেন, কিন্তু মিশর তাঁর ব্রিটিশ নাগরিকত্বকে স্বীকৃতি দিতে গড়িমসি করছে।

সর্বশেষ, ২৬শে ফেব্রুয়ারি ব্রিটিশ পার্লামেন্টে স্টারমার বলেন, “আমি এই বিষয়ে ফাত্তাহ’র মুক্তির জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করব। প্রয়োজনে আমি আবার ফোন করব।

আমি আগেও বিষয়টি উত্থাপন করেছি এবং ভবিষ্যতেও করব। আমি পরিবারকে কথা দিয়েছি, আমি তাই করব।”

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *