মা তার প্রাক্তন স্বামীর স্ত্রীর সাথে মা দিবস উদযাপন করতে অস্বীকার করেছেন, বলেছেন ‘ভাঙা পরিবারকে ঠিক করা আমার কাজ নয়’।
একটি পরিবারের জটিল চিত্র ফুটে উঠেছে যেখানে এক মা তার প্রাক্তন স্বামীর বর্তমান স্ত্রীর সঙ্গে মা দিবস উদযাপন করতে রাজি হননি। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরিবারে চরম অশান্তি সৃষ্টি হয়েছে এবং বিষয়টি নিয়ে অনলাইনে অনেকেই তাদের মতামত ব্যক্ত করেছেন।
ঘটনার সূত্রপাত হয় যখন ওই নারীর প্রাক্তন স্বামী দ্বিতীয় বিবাহ করেন। এরপর থেকেই সৎ মায়ের কিছু প্রত্যাশা জন্মায়, যা পূরণ করতে রাজি হননি মূল নারী। তিনি জানান, তার প্রাক্তন স্বামীর স্ত্রী আশা করেছিলেন, তিনি যেন তার সন্তানদের মা দিবসে শুভেচ্ছা জানান এবং তাদের সাথে সময় কাটান। কিন্তু তিনি তা করতে অস্বীকার করেন।
বিচ্ছেদের পর থেকে, প্রায় ১২ বছর ধরে এই দম্পতির মধ্যে সন্তানদের প্রতিপালন নিয়ে কিছু সমস্যা ছিল। প্রাক্তন স্বামীর নতুন বিয়ের পর সেই সমস্যা আরও বাড়ে। সৎ মা চেয়েছিলো মা দিবসে সবাই একসাথে মিলিত হোক। এমনকি স্কুলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও তাদের একসঙ্গে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল।
ওই নারী জানান, তার প্রাক্তন স্বামীর স্ত্রী চেয়েছিলেন, স্কুলের বিভিন্ন ফর্মে যেন তার মায়ের নামও অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কিন্তু তিনি এই প্রস্তাবে রাজি হননি। কারণ, তার মতে, এতে সন্তানদের মনে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।
সৎ মায়ের প্রত্যাশা ছিল, তার বিয়ের পরপরই যেন শিশুরা তাকে মা বলে ডাকতে শুরু করে। কিন্তু সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। এছাড়া, সন্তানদের পড়াশোনা, স্বাস্থ্য এবং গ্রীষ্মকালীন অবকাশ যাপনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতেও তিনি নিজের সিদ্ধান্ত চাপাতে চাইতেন। এমনকি, সন্তানদের নামের শেষে নিজের এবং প্রাক্তন স্বামীর পদবি যুক্ত করারও আবদার করেছিলেন তিনি।
ওই নারীর মতে, এই সবকিছুর মূলে রয়েছে ক্ষমতার আকাঙ্ক্ষা। তার প্রাক্তন স্বামীর স্ত্রী প্রচুর অর্থের মালিক এবং নিজের ইচ্ছামতো সবকিছু করতে অভ্যস্ত। তাই, যখন তার প্রত্যাশা পূরণ হয়নি, তখন তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন।
শুধু তাই নয়, ওই নারী আরও জানান, সৎ মা সন্তানদের ওপর অতিরিক্ত শাসন চালাতেন এবং তাদের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনতে চাইতেন। একবার তিনি তার ছেলের বন্ধুর বাবা-মাকে অপমান করেন এবং পরবর্তীতে তাদের মধ্যে সম্পর্ক ছিন্ন করার চেষ্টা করেন। এতে করে সন্তানেরা সৎ মাকে এড়িয়ে চলতে শুরু করে।
মা দিবসকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে। সম্প্রতি সৎ মা একটি সন্তানের জন্ম দেন এবং তিনি আশা করেন, এবার মা দিবসে তার আগের সংসারের সন্তানেরাও তার সঙ্গে যোগ দেবে। কিন্তু ওই নারী এবং তার সন্তানেরা জানিয়ে দেয়, তারা মায়ের সঙ্গেই সময় কাটাতে চায়।
এরপরে প্রাক্তন স্বামী একটি অপ্রত্যাশিত প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, তার স্ত্রীর প্রথম মা দিবস, তাই সন্তানদের সেখানে যাওয়া উচিত। এমনকি তিনি এও বলেন যে, সন্তানদের সেখানে যেতে রাজি করাতে না পারলে তিনি নিজেও সেখানে যাবেন না।
ওই নারী সঙ্গে সঙ্গেই তার স্বামীর এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি জানান, তিনি তার স্বামীর স্ত্রীর সঙ্গে মা দিবস উদযাপন করতে রাজি নন। এরপর তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয় এবং তিনি তার স্বামীর ফোন ধরা বন্ধ করে দেন।
বিষয়টি নিয়ে প্রাক্তন স্বামীর বোনও তাদের মাঝে আসেন এবং তিনি ওই নারীকে বিষয়টি বিবেচনা করতে বলেন। তিনি আরও বলেন, তার (ওই নারীর) কারণেই নাকি শিশুরা সৎ মাকে পছন্দ করে না। কিন্তু ওই নারী তার কথায় কোনো গুরুত্ব দেননি।
বর্তমানে অনলাইনে অনেকেই এই নারীর প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। তাদের মতে, শিশুরা এখন যথেষ্ট বড় এবং তাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার আছে। সৎ মায়ের নিজের সন্তান হয়েছে এবং তিনি মা হিসেবে সম্মানিত হতে পারেন, তবে এর জন্য অন্যকে চাপ দেওয়াটা সঠিক নয়।
তথ্য সূত্র: পিপল