বিদেশী মায়ের গোপন রহস্য: কেন তিনি আমাদের ঐতিহ্যবাহী খাবার রাঁধেননি?

শিরোনাম: অভিবাসী মায়ের সংগ্রাম: শিকড় খোঁজার গল্পে খাদ্য আর ভালোবাসার অন্বেষণ

প্রবাসে একজন মায়ের জীবন, সংগ্রাম আর শিকড়ের প্রতি ভালোবাসার এক অসাধারণ গল্প। এই গল্পে মিশে আছে খাদ্য, সংস্কৃতি আর পরিবারের গভীর টান।

ফিলিপাইনের একজন অভিবাসী মায়ের আমেরিকায় টিকে থাকার লড়াই এবং তাঁর মেয়ের চোখে সেই কঠিন দিনগুলোর প্রতিচ্ছবি – এমনই এক হৃদয়স্পর্শী আখ্যান তুলে ধরা হলো।

নব্বইয়ের দশকে, উন্নত জীবনের আশায় অনেক মানুষ পাড়ি জমাতেন আমেরিকায়। তাঁদেরই একজন ছিলেন ফিলিপাইনের এক নারী, যিনি ভালোবাসার টানে সুদূর আমেরিকায় এসেছিলেন।

সঙ্গে ছিল দুটি ছোট সন্তান। শুরুতে, সবকিছু ছিল কঠিন। নতুন পরিবেশ, অচেনা সংস্কৃতি, আর ভাষার ভিন্নতা – সব মিলিয়ে এক কঠিন জীবন।

মায়ের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল সেখানে কাজ খুঁজে নেওয়া। তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা সত্ত্বেও, অভিবাসী হওয়ার কারণে সহজে চাকরি পাওয়া যাচ্ছিল না।

দিনের পর দিন চলতো কঠিন সংগ্রাম। সংসার চালানোর জন্য মা বেছে নিতেন বিভিন্ন ধরনের কাজ – বেকারি থেকে শুরু করে মুদি দোকান, এমনকি ব্যাংকের সামান্য কর্মচারী হিসেবেও কাজ করতে হয়েছে তাঁকে।

পরিবারের মুখে দু’বেলা খাবার তুলে দিতে গিয়ে তিনি যেন নিজের পরিচয়টাই হারাতে বসেছিলেন। একদিকে দারিদ্র্য, অন্যদিকে অনিশ্চয়তা, সব মিলিয়ে এক দমবন্ধ করা পরিস্থিতি।

ছোটবেলায় মেয়েটি দেখতেন, তাঁদের খাবার তালিকায় বেশিরভাগ সময়ই থাকতো মাইক্রোওয়েভে গরম করা খাবার। মা যেন রান্নাঘর থেকে দূরে থাকতেন।

সম্ভবত জীবিকার তাগিদে নিজের সংস্কৃতি থেকে দূরে চলে গিয়েছিলেন তিনি। হয়তো চেয়েছিলেন, দ্রুত এই সমাজের সঙ্গে মিশে যেতে।

কিন্তু সময় বদলে যায়। কঠোর পরিশ্রমে মা ধীরে ধীরে সাফল্যের দিকে এগিয়ে যান। ব্যাংকে ভালো চাকরি পাওয়ার পর তাঁর জীবনে আসে কিছুটা স্থিতিশীলতা।

এরপরই যেন তিনি ধীরে ধীরে নিজের শিকড়ের দিকে ফিরে যেতে শুরু করেন। রান্নাঘরে ফিরতে শুরু করেন, যেখানে তিনি তাঁর সংস্কৃতি আর ভালোবাসাকে নতুন করে খুঁজে পান।

ফিলিপিনো খাবার রান্না করা শুরু করেন, যা একসময় তাঁর কাছে ছিল অচেনা।

এই পরিবর্তনের কারণ হয়তো অনেক। হয়তো তিনি তাঁর সন্তানদের কাছে নিজের সংস্কৃতি তুলে ধরতে চেয়েছেন, অথবা নিজের শেকড়ের প্রতি ভালোবাসাকে নতুন করে অনুভব করতে চেয়েছেন।

হয়তো বা, কঠিন সময়ে প্রিয়জনদের আপন করে কাছে পাওয়ার এক নীরব চেষ্টা ছিল তাঁর এই রান্না।

মেয়েটি বড় হওয়ার পর বুঝতে পারেন, মায়ের এই পরিবর্তনে লুকিয়ে ছিল অনেক গভীর অনুভূতি। অভিবাসী জীবনের কঠিন বাস্তবতা, আত্মপরিচয় সংকট, আর পরিবারের জন্য ত্যাগ – সবকিছুর প্রতিচ্ছবি যেন ফুটে উঠেছিল তাঁর রান্নাঘরে।

মেয়ের মনে হয়, মা যেন তাঁর পরিবারের কাছে তাঁদের সংস্কৃতি ফিরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন, যা তাঁরা আমেরিকায় আসার পর কিছুটা হলেও ভুলতে বসেছিলেন।

মা যখন তাঁর শিকড়ের কাছে ফিরে গেলেন, মেয়ের মনে হলো, তিনিও যেন ধীরে ধীরে মায়ের সেই সংস্কৃতিকে অনুভব করতে শুরু করেছেন।

মায়ের রান্নার মাধ্যমে তিনি যেন খুঁজে পান এক নতুন পরিচয়, যা তাঁকে তাঁর পরিবারের সঙ্গে আরও বেশি জুড়ে দেয়। হয়তো, এই খাদ্য আর ভালোবাসার গল্প একদিন মা ও মেয়ের একসঙ্গে রান্না করার মধ্য দিয়ে পরিপূর্ণতা পাবে।

তথ্য সূত্র: পিপলস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *