মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় জীবন বদলে যাওয়া, মায়ের উপর যৌন নির্যাতন এবং ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প
সাহসী মানুষেরা জীবনের কঠিন সময়েও কিভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারে, সেই দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক বার্টন ব্রুকস। ২০০৯ সালে উগান্ডায় এক ভয়াবহ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মারাত্মক আহত হয়েছিলেন তিনি। সেই সময়টাতে জীবন প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছিল তাঁর, এমনটাই মনে হয়েছিল।
শরীরের হাড় ভেঙে গিয়েছিল, অস্ত্রোপচার করতে হয়েছিল, দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালে ছিলেন। সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে ব্রুকসকে কঠিন এক মানসিক পথ পাড়ি দিতে হয়।
দুর্ঘটনার পর ব্রুকসের জীবনে নতুন মোড় আসে। এই সময়ে তিনি তাঁর পরিবারের সঙ্গে, বিশেষ করে মায়ের সঙ্গে নতুন করে সম্পর্ক স্থাপন করেন। ব্রুকসের মা কার্লা, তাঁর বাবার দেখাশোনা করতেন, যিনি দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন।
বাবার মৃত্যুর পর কার্লা যেন নতুন করে জীবন খুঁজে পান। মা ও ছেলের মধ্যে ভ্রমণের পরিকল্পনা হয়, যা তাঁদের সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করে তোলে। ইউরোপের বিভিন্ন স্থানে তাঁরা একসঙ্গে ভ্রমণ করেন এবং সেই ভ্রমণের স্মৃতিগুলো একটি ব্লগে লিপিবদ্ধ করেন।
কিন্তু নিয়তি হয়তো অন্য কিছু লিখে রেখেছিল। ভ্রমণের কিছু দিন পরেই কার্লার জীবনে নেমে আসে এক গভীর অন্ধকার। নিজের বাড়িতে যৌন নির্যাতনের শিকার হন তিনি। এই ঘটনায় ব্রুকস সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়েন।
মায়ের এই আঘাত তাঁকে এতটাই কষ্ট দেয় যে, তিনি এক গভীর মানসিক কষ্টের মধ্যে নিমজ্জিত হন।
এই ঘটনার পর কার্লা, সমাজের চোখে যৌন নির্যাতনের শিকার নারীদের অধিকার আদায়ের জন্য সোচ্চার হন। তিনি অন্যদের জন্য অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিলেন। ব্রুকস তাঁর মাকে একজন যোদ্ধা হিসেবে বর্ণনা করেছেন, যিনি কোনো প্রকার প্রতিকূলতার কাছে হার মানেননি।
২০২২ সালে কার্লার মৃত্যুর পর ব্রুকস আবারও এক কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হন। মায়ের মৃত্যুশোক তাঁকে একাকী করে তোলে। তিনি মানসিক শান্তির জন্য মনোবিদের শরণাপন্ন হন। থেরাপির মাধ্যমে তিনি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে শুরু করেন।
বর্তমানে ব্রুকস নিউইয়র্কে বসবাস করছেন এবং স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন সেবামূলক কাজে যুক্ত হচ্ছেন। তিনি এখন উপলব্ধি করেন, জীবনের সেরা সময়গুলো আসলে ফুরিয়ে যায় না। বরং, জীবনের প্রতিটি মুহূর্তই নতুন করে শুরু করার সুযোগ থাকে।
বার্টন ব্রুকসের এই গল্প আমাদের শিক্ষা দেয়, মানুষ হিসেবে আমরা কতটা শক্তিশালী হতে পারি। কঠিন পরিস্থিতি আমাদের দুর্বল করতে পারে, কিন্তু সাহস থাকলে সেই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব।
তথ্য সূত্র: পিপল