১৯৮১ সালে প্রচারিত অনুষ্ঠানে দেখা সেই শিশুর গল্প, যা আজও…

প্রিয় পাঠক,

ছোটবেলার একটি প্রিয় টেলিভিশন অনুষ্ঠান ‘মিস্টার রজার্স নেইবারহুড’-এর কথা নিশ্চয়ই অনেকের মনে আছে।

শিশুদের জন্য শিক্ষামূলক এবং মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন এই অনুষ্ঠানটি একসময় সারা বিশ্বে জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। এবার সেই অনুষ্ঠানের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান শিশুদের জন্য তৈরি করছে নতুন একটি চরিত্র, যাঁর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এক বিশেষ মানুষের স্মৃতি।

১৯৮১ সালে ‘মিস্টার রজার্স নেইবারহুড’-এর একটি বিশেষ পর্বে ১০ বছর বয়সী জেফ এরল্যাঙ্গার-কে দেখা গিয়েছিল।

মেরুরজ্জুর টিউমারের কারণে কোয়াড্রিপ্লেজিয়া (quadriplegia) রোগে আক্রান্ত হয়ে হুইলচেয়ারে চলাফেরা করতেন জেফ। সেই অনুষ্ঠানে তিনি জনপ্রিয় শিল্পী ফ্রেড রজার্সের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়েছিলেন, ‘ইটস ইউ আই লাইক’ গানটি।

জেফ এরল্যাঙ্গার-এর জীবন ছিল অনুপ্রেরণামূলক। ২০০৭ সালে তিনি মারা গেলেও, তাঁর স্মৃতি আজও অম্লান।

বর্তমানে, জেফের স্মৃতিকে সম্মান জানাতে ‘ডনকি হোডি’ নামক একটি নতুন শিশুতোষ অনুষ্ঠানে ‘জেফ মাউস’ নামের একটি চরিত্র যুক্ত করা হয়েছে।

এই চরিত্রটিও হুইলচেয়ার ব্যবহার করে এবং জেফের মতোই শারীরিক সীমাবদ্ধতা নিয়ে বেড়ে ওঠে। অনুষ্ঠানটি তৈরি করেছে ফ্রেড রজার্স প্রোডাকশনস এবং স্পিফি পিকচার্স।

জেফ মাউস-এর চরিত্রে কণ্ঠ দিয়েছেন অভিনেতা ও টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব জে ম্যানুয়েল।

তিনিও ‘অস্টিওজেনেসিস ইমপারফেক্টা টাইপ ৩’ (Osteogenesis Imperfecta Type 3) নামক বিরল রোগে আক্রান্ত, যা তাঁর হাড়কে দুর্বল করে দেয়।

জে ম্যানুয়েল এই চরিত্রে কাজ করার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, “আমার ভেতরের শিশুটি যেন শান্তি খুঁজে পেয়েছে।

এই চরিত্রটি আমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ছোটবেলায় আমি এমন কাউকে দেখিনি যে আমার মতো শারীরিক সীমাবদ্ধতা নিয়ে মিডিয়ায় প্রতিনিধিত্ব করছে।

আমি আশা করি, এই চরিত্রটি দেখে কোনো শিশু নিজেকে একা অনুভব করবে না।”

অনুষ্ঠান নির্মাতারা চরিত্রটি তৈরির সময় বিশেষভাবে মনোযোগ দিয়েছেন, যাতে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের সঠিকভাবে উপস্থাপন করা যায়।

‘জেফ মাউস’ চরিত্রটি একজন দুঃসাহসী অভিযাত্রী এবং প্রকৃতিপ্রেমী হিসেবে পরিচিত।

চরিত্রটির হুইলচেয়ার তৈরি করতে সাহায্য করেছে ‘পার্মোবিল’ নামক একটি প্রতিষ্ঠান, যারা হুইলচেয়ার তৈরি করে।

এছাড়া, ‘ডিসএবিলিটি বিলংস’ নামক একটি অলাভজনক সংস্থা এই চরিত্রটির উন্নয়নে পরামর্শ দিয়েছে।

জে ম্যানুয়েল আরও জানান, “আমি মনে করি, শারীরিক প্রতিবন্ধকতা সম্পন্ন একজন মানুষকে দিয়ে এই ধরনের চরিত্রে কণ্ঠ দেওয়াটা খুবই জরুরি।

এর মাধ্যমে আমরা বোঝাতে পারি যে, ভিন্নভাবেও অনেক কিছু করা সম্ভব।

জীবনে মানিয়ে নেওয়ার এবং প্রতিকূলতা জয় করার যে মানসিকতা, তা আমি সবসময় নিজের মধ্যে অনুভব করি।

এই চরিত্রটি সেই বার্তাটি আরও বেশি করে মানুষের কাছে পৌঁছে দেবে।”

জেফ মাউসের চরিত্রটি শারীরিক প্রতিবন্ধকতা সম্পন্ন শিশুদের জন্য একটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে, এমনটাই প্রত্যাশা সংশ্লিষ্ট সকলের।

ছোটদের জন্য তৈরি হওয়া এই ধরনের অনুষ্ঠান সমাজে ভিন্ন ধরনের মানুষের প্রতি সহানুভূতি তৈরি করতে সাহায্য করে এবং শিশুদের মধ্যে পারস্পরিক সহমর্মিতা ও শ্রদ্ধাবোধের জন্ম দেয়।

তথ্য সূত্র: পিপল ম্যাগাজিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *