মুখের ব্যায়াম: সৌন্দর্য বাড়াতে কতটা কার্যকর?

বিশ্বজুড়ে সৌন্দর্যচর্চার এক নতুন ধারা হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছে ‘ফেস ইয়োগা’ বা মুখের ব্যায়াম। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে, যেখানে অনেকেই এর মাধ্যমে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি, ফাইন লাইনস কমানো এবং মুখের পেশি সুগঠিত করার দাবি করছেন।

আসলেই কি ফেস ইয়োগা এইসব ক্ষেত্রে কার্যকর? আসুন, বিশেষজ্ঞ মতামত ও বৈজ্ঞানিক গবেষণার আলোকে এর সত্যতা যাচাই করি।

ফেস ইয়োগা মূলত মুখের পেশিগুলোর জন্য এক ধরনের ব্যায়াম। এই পদ্ধতিতে মুখের বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি ও পুনরাবৃত্তিমূলক মুভমেন্টের মাধ্যমে মুখের পেশিগুলোকে সক্রিয় করা হয়। ধারণা করা হয়, নিয়মিত এই ব্যায়াম করলে মুখের ত্বক টানটান হয়, যা বয়সের ছাপ কমাতে সহায়ক। অনেকে একে অস্ত্রোপচার বা কসমেটিক পদ্ধতির বিকল্প হিসেবেও বিবেচনা করেন।

নিউ ইয়র্ক-এর ত্বক বিশেষজ্ঞ এবং ওয়েইল কর্নেল মেডিকেল কলেজের ডার্মাটোলজির ক্লিনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর ড. আনেটা রেজকো-র মতে, মুখের ত্বক, ফ্যাট এবং পেশি—এই তিনটি স্তরের সমন্বয়ে গঠিত। সময়ের সাথে সাথে, বা বোটক্সের মতো চিকিৎসা পদ্ধতির কারণে, মুখের পেশি দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ফলে ফ্যাট প্যাডগুলো ঝুলে পড়ে, যা মুখের স্বাভাবিক গঠন পরিবর্তন করে দেয়। ফেস ইয়োগা এই পেশিগুলোকে শক্তিশালী করে মুখের আকার ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করতে পারে।

শিকাগোর নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির ফেলবার্গ স্কুল অফ মেডিসিনের ডার্মাটোলজি বিভাগের ভাইস চেয়ার ও অধ্যাপক এবং একজন প্র্যাকটিসিং ডার্মাটোলজিস্ট ড. মুরাদ আলম-এর নেতৃত্বে ২০১৮ সালে একটি গবেষণা হয়। এতে দেখা যায়, যারা নিয়মিতভাবে ফেস ইয়োগা করেছেন, তাদের মুখের গড়নে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। বিশেষ করে গালের পেশিগুলোতে এর প্রভাব ছিল সবচেয়ে বেশি। তবে, ড. আলমের মতে, এই ব্যায়াম কসমেটিক পদ্ধতির সম্পূর্ণ বিকল্প নয়, কারণ এর প্রভাব সীমিত।

ফেস ইয়োগা-র সম্ভাব্য উপকারিতাগুলোর মধ্যে রয়েছে মুখের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি এবং লিম্ফ্যাটিক ড্রেনেজ-এর উন্নতি ঘটানো। ড. রেজকো-র মতে, মুখের লিম্ফ নোডগুলো বর্জ্য অপসারণ ও সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। ঘুমের সময় লিম্ফ্যাটিক ফ্লুইড জমে থাকার কারণে সকালে ঘুম থেকে উঠলে অনেকের মুখ ফোলা দেখায়। ফেস ইয়োগা এই ফোলাভাব কমাতে সাহায্য করতে পারে।

একজন ইয়োগা প্রশিক্ষক ও ‘দ্য ইয়োগা ফেস’ বইয়ের লেখক আনেলিজ হাগেন-এর মতে, ফেস ইয়োগা শুধু ব্যায়াম বা সৌন্দর্যচর্চার একটি উপায় নয়, বরং এটি মুখের প্রতি মনোযোগী হওয়ার একটি প্রক্রিয়া। মুখের বিভিন্ন অভিব্যক্তি সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করে এটি মানসিক শান্তিরও যোগান দিতে পারে।

তবে, ফেস ইয়োগা করার সময় কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকা প্রয়োজন। ড. আলম-এর মতে, সাধারণত এই ব্যায়াম ক্ষতিকর নয়। তবে চোখের নিচের ত্বক খুব সংবেদনশীল হওয়ায় এখানে অতিরিক্ত ঘষা বা চাপ দেওয়া উচিত নয়। কোনো সমস্যা হলে অবশ্যই ত্বক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।

সবশেষে বলা যায়, ফেস ইয়োগা ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হতে পারে। তবে এটি কোনো স্থায়ী সমাধান নয়। ত্বকচর্চার ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ সবসময় জরুরি।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *