MS আক্রান্ত হয়েও বিশ্ব ভ্রমণ! এক নারীর জীবনযুদ্ধ!

বহু বছর ধরে মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস (Multiple Sclerosis – MS) নামক এক জটিল রোগে আক্রান্ত হয়েও যিনি হার মানেননি, বরং বিশ্বজুড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, তিনি হলেন রবিন কোহেন। জীবনের ২৫ বছরের বেশি সময় ধরে এই রোগকে সঙ্গী করে কিভাবে তিনি এগিয়ে চলেছেন, সেই গল্প শুনলে অনুপ্রেরণা পাওয়া যায়।

ক্যালিফোর্নিয়ার বাসিন্দা রবিন, যিনি পেশায় একজন আইনজীবী, তার এই কঠিন পথচলার কাহিনী আমাদের দেশের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

২৫ বছর আগে, রবিন ক্যালিফোর্নিয়ার স্কাই লোন্ডা অঞ্চলে এক পাহাড়ি পথে হেঁটে বেড়াচ্ছিলেন। হঠাৎ করেই তার পায়ে দুর্বলতা অনুভব হয়।

চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পরীক্ষার পর জানা যায়, তিনি মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস নামক স্নায়ু রোগে আক্রান্ত। এই রোগটি স্নায়ুর আবরণকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, যার ফলে শরীরের বিভিন্ন অংশে দুর্বলতা দেখা দেয়।

রবিন জানান, প্রথম দিকে তার পায়ের পাতা ফেলতে সমস্যা হতো। ধীরে ধীরে এই সমস্যা আরও বাড়ে।

এমএস-এর কারণে রবিন কোহেনের শরীরের নিম্নাংশে, বিশেষ করে কোমর থেকে পায়ের দিকে, দুর্বলতা অনুভব হয়। হাঁটাচলার সময় তার পায়ের পেশিগুলোতে এতটাই চাপ পড়ে যেন এক হাজার পাউন্ড ওজন বইতে হচ্ছে।

শরীরের ভারসাম্য রক্ষার জন্য তিনি প্রথম দিকে একটি লাঠি ব্যবহার করতেন। কিন্তু তাতেও সমস্যার সমাধান হয়নি।

এরপর তিনি স্কুটার ব্যবহার করতে শুরু করেন। রবিন বলেন, প্রথম দিকে স্কুটার ব্যবহার করতে তার দ্বিধা ছিল, কারণ তিনি ভেবেছিলেন, এর ফলে হয়তো তিনি আরও বেশি দুর্বল হয়ে পড়বেন।

তবে, বাস্তবে হয়েছে ঠিক উল্টো। স্কুটার তাকে আরও বেশি স্বাধীনতা দিয়েছে। এখন তিনি নিয়মিত সাঁতার কাটেন, যোগা করেন এবং শরীরচর্চা করেন।

রবিন কোহেন জানান, এমএস-এর কারণে ভ্রমণ করাটা বেশ কঠিন। বিমানের টিকিট বুক করা থেকে শুরু করে হোটেলের ঘর নির্বাচন করা—প্রতিটি ক্ষেত্রেই তাকে বিশেষ মনোযোগ দিতে হয়।

বিশেষ করে ইউরোপের অনেক পুরনো শহরে, যেখানে অলিগলিতে সিঁড়ি এবং উঁচু-নিচু পথ রয়েছে, সেখানে চলাফেরা করতে অসুবিধা হয়।

ভ্রমণের সময় বিভিন্ন ধরনের অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয় রবিনকে। একবার সেন্ট বার্টসে বেড়াতে গিয়ে তিনি বিচ বাগি (beach buggy) ব্যবহার করেছিলেন।

এছাড়া, ইতালির ক্যাপরিতে, কিছু তরুণ তাকে কাঁধে করে পাহাড়ের উপরে তুলেছিল। রবিন বলেন, মানুষ সাধারণত সহানুভূতিশীল হয়, যদি আপনি তাদের প্রতি সদয় হন।

চীন, স্কটল্যান্ড, এবং অন্যান্য দেশে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে রবিন জানান, এমএস- আক্রান্ত হওয়ার কারণে অনেক সময় বিমানে সিট পাওয়া বা হোটেলের ঘর নির্বাচন করা কঠিন হয়ে পড়ে।

অনেক সময় অন্যদের থেকে সাহায্য চাইতে হয়।

বর্তমানে রবিন কোহেন প্যারিস ও লন্ডনের মতো শহরগুলোতে স্কুটার চালিয়ে ঘোরার আনন্দ উপভোগ করেন। তার মতে, ভ্রমণের মাধ্যমে জীবনের প্রতি নতুন করে আকর্ষণ সৃষ্টি হয়, যা তাকে আরও বেশি উদ্দীপ্ত করে তোলে।

রবিন মনে করেন, ভ্রমণের সময় হাসিখুশি থাকাটা খুব জরুরি।

তথ্যসূত্র: ট্রাভেল + লেজার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *