সাবধান! মাল্টিভিটামিন: কারা খাবেন, আর কারা এড়িয়ে চলবেন?

মাল্টিভিটামিন: সবার জন্য কি এটা প্রয়োজনীয়?

আজকাল স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ার সাথে সাথে মাল্টিভিটামিন সেবনের প্রবণতাও বাড়ছে। বাজারে বিভিন্ন ধরনের মাল্টিভিটামিন পাওয়া যায়, যেগুলি শরীরের প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ সরবরাহ করার প্রতিশ্রুতি দেয়।

কিন্তু সত্যিই কি সবার জন্য মাল্টিভিটামিন খাওয়া জরুরি? আসুন, এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।

বিশেষজ্ঞদের মতে, মাল্টিভিটামিন সবার জন্য প্রয়োজনীয় নয়। কিছু মানুষের ক্ষেত্রে, যেমন গর্ভবতী মহিলা, বৃদ্ধ ব্যক্তি বা বিশেষ স্বাস্থ্য পরিস্থিতিতে থাকা ব্যক্তিদের জন্য মাল্টিভিটামিন উপকারী হতে পারে।

তবে, সাধারণ সুস্থ মানুষের ক্ষেত্রে, সুষম খাদ্য গ্রহণই শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করার সবচেয়ে ভালো উপায়।

মাল্টিভিটামিন কাদের জন্য উপকারী?

  • গর্ভবতী মহিলা: গর্ভাবস্থায় মায়ের শরীরের অতিরিক্ত পুষ্টির প্রয়োজন হয়। বিশেষ করে, ফলিক অ্যাসিড নামক ভিটামিন ভ্রূণের সঠিক বিকাশে সাহায্য করে এবং জন্মগত ত্রুটি (যেমন, শিশুর স্নায়ু-সংক্রান্ত সমস্যা) প্রতিরোধে সহায়তা করে। তাই, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী মাল্টিভিটামিন গ্রহণ করা যেতে পারে।
  • বয়স্ক ব্যক্তি: বয়সের সাথে সাথে শরীরের ভিটামিন শোষণের ক্ষমতা কমে যায়। ভিটামিন বি১২ এবং ডি-এর অভাব তাদের মধ্যে দেখা যায়। মাল্টিভিটামিন সেবন স্মৃতিশক্তি বাড়াতেও সাহায্য করতে পারে।
  • বিশেষ খাদ্যাভ্যাস: যারা নিরামিষভোজী বা নির্দিষ্ট কিছু খাবার গ্রহণ করেন, তাদের শরীরে কিছু ভিটামিনের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী মাল্টিভিটামিন গ্রহণ করা যেতে পারে।

মাল্টিভিটামিনের সম্ভাব্য ঝুঁকি:

মাল্টিভিটামিন সেবনের কিছু ঝুঁকিও রয়েছে। অতিরিক্ত ভিটামিন গ্রহণ করলে বমি বমি ভাব, মাথা ঘোরা, এমনকি লিভার বা কিডনির ক্ষতি হতে পারে।

কিছু মাল্টিভিটামিন ওষুধে বিদ্যমান উপাদানগুলির সাথে মিশে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ভিটামিন কে রক্ত জমাট বাঁধার ওষুধগুলির কার্যকারিতা কমিয়ে দিতে পারে। তাই, মাল্টিভিটামিন সেবনের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

সুষম খাদ্য:

ভিটামিন ও খনিজ গ্রহণের সবচেয়ে ভালো উপায় হল সুষম খাদ্য গ্রহণ করা। আমাদের দেশের খাদ্য তালিকায় বিভিন্ন ধরনের সবজি, ফল, শস্য এবং মাছ-মাংস বিদ্যমান।

খাদ্য তালিকায় বৈচিত্র্য আনলে প্রয়োজনীয় সব পুষ্টি উপাদান পাওয়া সম্ভব। উদাহরণস্বরূপ, সবুজ শাকসবজি ভিটামিন এ এবং ফলিক অ্যাসিডের ভালো উৎস, ডিম এবং মাছ ভিটামিন ডি সরবরাহ করে, এবং বিভিন্ন ধরনের ডাল ও শস্য ভিটামিন বি কমপ্লেক্স সরবরাহ করে।

মাল্টিভিটামিন নির্বাচনের ক্ষেত্রে কিছু বিষয় মনে রাখতে হবে:

  • চিকিৎসকের পরামর্শ: মাল্টিভিটামিন সেবনের আগে অবশ্যই একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।
  • গুণমান: নির্ভরযোগ্য ব্র্যান্ডের এবং পরীক্ষিত মাল্টিভিটামিন গ্রহণ করুন।
  • অতিরিক্ত গ্রহণ নয়: মাল্টিভিটামিন খাদ্য প্রতিস্থাপনের উদ্দেশ্যে নয়, বরং খাদ্যের পরিপূরক হিসেবে গ্রহণ করা উচিত।

পরিশেষে, মাল্টিভিটামিন সেবন একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত, যা প্রতিটি ব্যক্তির স্বাস্থ্য পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয়তা যাচাই করে, সঠিক মাল্টিভিটামিন নির্বাচন করা উচিত।

মনে রাখবেন, স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার জন্য সুষম খাদ্য, পর্যাপ্ত ঘুম ও নিয়মিত ব্যায়াম অপরিহার্য।

(এই নিবন্ধটি শুধুমাত্র তথ্য প্রদানের উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছে। কোনো চিকিৎসা বিষয়ক পরামর্শের জন্য, অনুগ্রহ করে একজন যোগ্যতাসম্পন্ন স্বাস্থ্য পেশাদারের সাথে যোগাযোগ করুন।)

তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *