শরীরচর্চার পর পেশিতে ব্যথা: ভালো নাকি বিপদ?

শরীরচর্চার পর পেশিতে ব্যথা: ভালো নাকি খারাপ?

শরীরচর্চা করলে পেশিতে ব্যথা হওয়াটা অনেকের কাছেই পরিচিত একটা অভিজ্ঞতা। ব্যায়াম করার পর পেশিতে এই ব্যথা হয়, যাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় ‘ডিলেড অনসেট মাসল সোরনেস’ বা ‘ডমস্’ (DOMS) বলা হয়।

এই ব্যথা সাধারণত ব্যায়াম করার ১২ থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শুরু হয় এবং কয়েক দিন পর্যন্ত থাকতে পারে। কিন্তু এই ব্যথা ভালো, নাকি খারাপ? আসুন, বিশেষজ্ঞদের মতামত জেনে নেওয়া যাক।

ডা. মিশেল বার্ড, যিনি মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের কাইনেসোলজি বিভাগের অধ্যাপক, তাঁর মতে, হালকা ব্যথা হলে চিন্তার কিছু নেই, তবে সুস্থ থাকতে এটা জরুরিও নয়।

ব্যায়ামের পরে ব্যথা হওয়া মানেই যে ভালো ব্যায়াম হয়েছে, তা কিন্তু সবসময় নাও হতে পারে। তাহলে, কতটা ব্যথা হলে বুঝবেন যে আপনি বেশি করছেন?

আসলে, ডমসের কারণ এখনো পুরোপুরি পরিষ্কার নয়, তবে বিজ্ঞানীরা মনে করেন, ব্যায়ামের সময় পেশী এবং সংযোগকারী টিস্যুতে সামান্য ক্ষতি হয়।

শরীর তখন সেই ক্ষতি সারানোর চেষ্টা করে। এই মেরামতের প্রক্রিয়ার কারণে শরীরে প্রদাহ হয়, যা ব্যথার কারণ হতে পারে। অনেকেই মনে করেন, ল্যাকটিক অ্যাসিডের কারণে এই ব্যথা হয়।

কিন্তু এটা ঠিক নয়। ব্যায়ামের সময় পেশিকে অক্সিজেন সরবরাহ করতে ল্যাকটিক অ্যাসিড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তবে ব্যায়ামের কিছুক্ষণ পরেই এটা শরীর থেকে বেরিয়ে যায়।

তাহলে, ব্যায়ামের পরে ব্যথা হওয়া কি ভালো?

আসলে, এটা নির্ভর করে আপনার লক্ষ্যের ওপর। যদি আপনি কোনো প্রতিযোগিতার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন, অথবা ব্যক্তিগত সেরা ফল করার চেষ্টা করছেন, তাহলে ব্যথা হওয়াটা স্বাভাবিক।

কিন্তু সবসময় এত তীব্র ব্যায়াম করার প্রয়োজন নেই। ডা. বার্ড বলেন, অনেকেই প্রতিবারই ব্যক্তিগত সেরা ফল করার চেষ্টা করেন, যা ঠিক নয়।

ব্যায়ামের ধরনের এবং তীব্রতার পরিবর্তন করা উচিত, যাতে শরীর সেরে ওঠার সময় পায়।

নতুন কোনো ব্যায়াম শুরু করলে বা আগে করেননি এমন কোনো কাজ করলে পেশিতে ব্যথা হতে পারে। ফিটনেস প্রশিক্ষক জেসি ডিয়াজ-হেরেরা বলেন, “এই ব্যথা আসলে আপনার পেশি নতুন কিছু শিখছে, তারই প্রমাণ।”

তবে, ব্যথার কারণে অনেকে ব্যায়াম করতে চান না। অতিরিক্ত ব্যথা হলে তা এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। ডিয়াজ-হেরেরা মনে করেন, শরীরচর্চা আমাদের সুস্থ জীবনের জন্য, তাই এর মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত দৈনন্দিন জীবনকে আরও ভালোভাবে উপভোগ করা।

হালকা ব্যায়াম করলে যদি আপনি ভালো অনুভব করেন, তাহলে সেটাই যথেষ্ট।

কতটা ব্যথা হলে বুঝবেন বেশি করছেন?

যদি ব্যায়ামের কয়েক দিন পর আপনার নড়াচড়া করতে খুব অসুবিধা হয়, যেমন—হাত নাড়াতে পারছেন না অথবা টয়লেটে বসতে সমস্যা হচ্ছে, তাহলে বুঝতে হবে আপনি হয়তো অতিরিক্ত ব্যায়াম করেছেন।

ডা. সারাহ কুজমিয়াক-গ্লান্সি বলেন, যদি ব্যথা তিন দিনের বেশি থাকে, তাহলে বুঝতে হবে আপনি শরীরের সীমা অতিক্রম করেছেন।

সাধারণত, সামান্য ব্যথা নিয়ে ব্যায়াম করা যেতে পারে। তবে, অতিরিক্ত ব্যথা হলে ব্যায়াম করলে পেশি বা জয়েন্টে আঘাত লাগার সম্ভাবনা থাকে।

কুজমিয়াক-গ্লান্সি আরও বলেন, অতিরিক্ত ব্যথার কারণে আপনি ব্যায়ামে ভালো ফলও করতে পারবেন না।

অতিরিক্ত ব্যথা হলে, বিশ্রাম নেওয়া জরুরি। হালকা স্ট্রেচিং বা হাঁটাচলার মতো ব্যায়াম করতে পারেন। ডিয়াজ-হেরেরার মতে, “আপনার শরীরের জন্য সবচেয়ে ভালো হলো নিয়মিত শরীরচর্চা করা।”

অতিরিক্ত ব্যথা প্রতিরোধের উপায় কী?

  • ব্যায়ামের আগে শরীরকে প্রস্তুত করুন। পর্যাপ্ত জল পান করুন।
  • ব্যায়ামের আগে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার খান। যেমন—ভাত বা রুটি।
  • ব্যায়ামের পরে প্রোটিন গ্রহণ করুন। যেমন—ডিম, ডাল বা মাছ।
  • ধীরে ধীরে ব্যায়ামের পরিমাণ বাড়ান।
  • সপ্তাহের ভিন্ন ভিন্ন দিনে বিভিন্ন পেশীর ব্যায়াম করুন।
  • আরামের জন্য ম্যাসাজ, ফোম রোলিং বা হালকা যোগা করতে পারেন।
  • পর্যাপ্ত ঘুম এবং মানসিক চাপমুক্ত থাকার চেষ্টা করুন।

ডা. বার্ড বলেন, ভালো খাবার, পর্যাপ্ত ঘুম এবং মানসিক চাপ কমানোর মাধ্যমে আপনি দ্রুত সেরে উঠতে পারেন।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *