ওকলাহোমার মুসকোজি জাতির সুপ্রিম কোর্ট সম্প্রতি এক গুরুত্বপূর্ণ রায় দিয়েছে।
এই রায়ে, এক সময়ের ক্রীতদাসদের বংশধরদের উপজাতি নাগরিকত্বের অধিকার দেওয়া হয়েছে। বুধবারের এই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তটি ২০১৯ সালে উপজাতি নাগরিকত্ব বোর্ডের নেওয়া একটি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ছিল, যেখানে রক্তের সম্পর্কের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব দিতে অস্বীকার করা হয়েছিল।
এই রায়ের ফলে হাজার হাজার মানুষের উপজাতি সদস্য হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করলে দেখা যায়, মুসকোজি জাতি একসময় দাসত্বের চর্চা করত।
১৮৬৬ সালের একটি চুক্তির মাধ্যমে তারা দাসপ্রথা বিলুপ্ত করে এবং প্রাক্তন ক্রীতদাসদের নাগরিকত্ব প্রদান করে। কিন্তু ১৯৭৯ সালে, উপজাতিরা একটি নতুন সংবিধান গ্রহণ করে, যেখানে নাগরিকত্ব সীমিত করা হয় ‘মুসকোজি (ক্রিক) ইন্ডিয়ানস বাই ব্লাড’ হিসেবে চিহ্নিত ব্যক্তিদের বংশধরদের মধ্যে, যাদের নাম ১৯০০ সালের দিকে তৈরি হওয়া ডওস রোলে তালিকাভুক্ত ছিল।
আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, নাগরিকত্ব বোর্ডকে ১৮৬৬ সালের চুক্তিটি অনুসরণ করতে হবে এবং যারা মুসকোজি বা ফ্রিডম্যান—উভয় তালিকাতেই যাদের পূর্বপুরুষদের নাম ছিল, তাদের আবেদন বিবেচনা করতে হবে।
এই রায়ের ফলে রাইন্ডা গ্রেসন এবং জেফরি কেনেডির মতো আবেদনকারীরা উপকৃত হবেন।
আদালত আরও জানিয়েছে, মুসকোজি জাতির সংবিধানে ‘রক্তের সম্পর্ক’-এর ভিত্তিতে তৈরি হওয়া কোনো নিয়ম অবৈধ।
এর ফলে উপজাতিদের শাসনতান্ত্রিক কাঠামোতেও পরিবর্তন আসতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, কোনো পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হলে একজনকে অন্তত এক-চতুর্থাংশ মুসকোজি বংশোদ্ভূত হতে হয়, যা সম্ভবত এখন সংশোধন করতে হবে।
এই রায়ের ফলে উপজাতি নাগরিকত্বের ক্ষেত্রে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে।
যারা দীর্ঘদিন ধরে তাদের অধিকারের জন্য অপেক্ষা করছিলেন, এই রায় তাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
রাইন্ডা গ্রেসন বলেছেন, এই জয় তাদের পূর্বপুরুষদের প্রতি সম্মান জানাচ্ছে এবং একই সাথে ভবিষ্যতের জন্য ঐক্য ও পুনর্মিলনের সুযোগ তৈরি করছে।
জেফরি কেনেডি বলেন, তাদের পূর্বপুরুষরা সেই চুক্তিতে বিশ্বাস রেখেছিলেন এবং আদালত অবশেষে তাদের কথার সম্মান দিয়েছে।
আদালতের এই সিদ্ধান্ত সেমিনোল এবং চেরোকি জাতির মতো অন্যান্য উপজাতিদের ক্ষেত্রেও একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে, যেখানে ফ্রিডম্যান বংশধরদের নাগরিকত্ব প্রদানের বিষয়ে আইনি লড়াই হয়েছে।
তবে, এই ধরনের নাগরিকত্বের বাস্তবায়ন রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীল হতে পারে।
সেমিনোল জাতির প্রায় ২,৫০০ ফ্রিডম্যান নাগরিক উচ্চ পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন না এবং উপজাতিদের কিছু সুযোগ-সুবিধা থেকে তারা বঞ্চিত। অন্যদিকে, চেরোকি জাতির ১৭,০০০ ফ্রিডম্যান নাগরিককে পূর্ণ সদস্যের মর্যাদা দেওয়া হয় এবং তারা সকল সুবিধা ভোগ করেন।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, মুসকোজি জাতির এই সিদ্ধান্ত তাদের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
এখন দেখার বিষয়, এই রায়ের ফলে উপজাতিরা কীভাবে তাদের নতুন সদস্যদের গ্রহণ করে এবং ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যায়।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস