মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক চিকিৎসায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন হতে চলেছে। চিকিৎসকেরা এখন রোগীদের সুস্থ করতে ওষুধপত্রের পাশাপাশি জাদুঘরে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। উন্নত বিশ্বে, বিশেষ করে কানাডা, সুইজারল্যান্ড এবং আমেরিকার কিছু অঞ্চলে, এই অভিনব চিকিৎসা পদ্ধতি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
বিষণ্ণতা, উদ্বেগ, এমনকি উচ্চ রক্তচাপের মতো সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে এই ধরনের প্রেসক্রিপশন দেওয়া হচ্ছে।
কানাডার মন্ট্রিয়ল মিউজিয়াম অফ ফাইন আর্টসে এই ধারণাটির সূত্রপাত হয়। সেখানকার তৎকালীন জেনারেল ডিরেক্টর নাতালি বন্ডিল মনে করতেন, জাদুঘর একটি বিশেষ স্থান, যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের মানসিক চাপ থেকে মুক্তি দিতে পারে।
তাঁর মতে, শিল্পের প্রতি মানুষের আগ্রহ মস্তিষ্কের জন্য উপকারী। এরপর, মন্ট্রিয়লের কয়েক হাজার চিকিৎসককে রোগীদের জন্য বিনামূল্যে মিউজিয়ামের টিকিট দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। উদ্দেশ্য ছিল, এই টিকিট ব্যবহারের মাধ্যমে রোগীদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটানো।
কোভিড-১৯ অতিমারীর কারণে মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সমস্যাগুলো আরও বেড়ে যায়। এর ফলস্বরূপ, এই ধরনের ‘মিউজিয়াম প্রেসক্রিপশন’-এর চাহিদা বেড়েছে।
সুইজারল্যান্ডের নুশাতেল শহরেও সম্প্রতি চিকিৎসকেরা রোগীদের জাদুঘর অথবা বোটানিক্যাল গার্ডেনে যাওয়ার জন্য টিকিট দেওয়া শুরু করেছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের প্রেসক্রিপশন দেওয়ার মূল কারণ হল, জাদুঘরে কাটানো সময় মানসিক চাপ কমাতে, একাকিত্ব দূর করতে, মেজাজ উন্নত করতে এবং মানসিক স্বাস্থ্যকে আরও শক্তিশালী করতে সহায়তা করে।
একজন মানুষের রুচি ও সংস্কৃতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে এই প্রেসক্রিপশন তৈরি করা জরুরি। অর্থাৎ, যিনি চিত্রকর্ম ভালোবাসেন, তাঁকে যদি গাড়ি জাদুঘরে যেতে বলা হয়, তবে তার ফল ভালো নাও হতে পারে।
ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর আর্টস ইন মেডিসিনের একজন অধ্যাপক তাসা গোল্ডেন বলেছেন, জাদুঘরের শান্ত ও নান্দনিক পরিবেশ আমাদের মনকে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে। এখানে সামাজিক মিথস্ক্রিয়ার সুযোগও তৈরি হয়, যা একাকিত্ব কমাতে সাহায্য করে।
ঐতিহ্যগত চিকিৎসার পাশাপাশি, এই ধরনের বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতিগুলো মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান