শিরোনাম: সঙ্গীতের জগতে প্রতারণা: নকল সুর থেকে এআই-এর জালিয়াতি পর্যন্ত
শুরুতে, গানের সুরের জগতে প্রতারণার ঘটনাগুলো শুনলে হয়তো অনেকেরই গা ঘিন ঘিন করতে পারে। আসল শিল্পীর বদলে অন্য কারো গান, নকল পরিচয় দিয়ে খ্যাতি লাভ, এমনকি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) মাধ্যমে তৈরি হওয়া গান—এসবই এখন সঙ্গীতের জগতে প্রতারণার গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
শ্রোতাদের বিভ্রান্ত করে অর্থ উপার্জনের এমন কিছু চাঞ্চল্যকর ঘটনা নিয়ে আজকের আলোচনা।
প্রতারণার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ছিল ‘মিলি ভ্যানিলি’ নামের একটি জার্মান আর-এন্ড-বি (R&B) যুগলবন্দী। নব্বইয়ের দশকে তাদের গানগুলি বিশ্বজুড়ে প্রায় ৭ মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়েছিল, শুধু আমেরিকাতেই বিক্রি হয়েছিল ৭ মিলিয়ন কপি, যা আন্তর্জাতিক বাজারে ছিল প্রায় ৩০ মিলিয়ন।
এমনকি সেরা নতুন শিল্পী হিসেবে তারা গ্র্যামি পুরস্কারও জেতেন। কিন্তু তাদের আসল কীর্তি ফাঁস হয়ে যায় যখন এক লাইভ অনুষ্ঠানে তাদের গানের ট্র্যাকের সমস্যা দেখা দেয়।
তাদের আসল কণ্ঠশিল্পী ছিলেন অন্য কয়েকজন, কিন্তু খ্যাতি আর সব অর্থ আত্মসাৎ করার জন্য তারা বেছে নিয়েছিলেন প্রতারণার পথ।
আরেকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো ‘সিলিবিল এন’ ব্রেইনস’ নামক এক স্কটিশ র্যাপ (rap) জুটির কাহীনি। তারা আমেরিকায় পরিচিতি লাভের জন্য নিজেদের কণ্ঠস্বর পরিবর্তন করে ক্যালিফোর্নিয়ার র্যাপ শিল্পী হিসাবে পরিচয় দেয়।
তারা এমনকি বিখ্যাত র্যাপার এমিনেমের (Eminem) দলের সাথে পারফর্ম করারও সুযোগ পেয়েছিল। কিন্তু বেশি দিন এই মিথ্যা পরিচয় ধরে রাখা তাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি।
ধ্রুপদী সঙ্গীতের জগতেও এমন প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে। হেনরি-গুস্তাভ ক্যাসাদেসুস নামের এক ব্যক্তি, যিনি আসলে বাখ পরিবারের হারিয়ে যাওয়া সুরকারদের কাজ পুনরুদ্ধার করেছেন বলে দাবি করতেন, কিন্তু পরে জানা যায়, তিনি এবং তার ভাইয়েরা নিজেরাই সেই সুরগুলি তৈরি করেছিলেন।
এছাড়া, পিয়ানোবাদক জয়েস হ্যাট্টোর ঘটনাও উল্লেখযোগ্য। তিনি দীর্ঘদিন ক্যান্সারে ভুগেছেন এবং মৃত্যুর পর জানা যায়, তিনি আসলে অন্য শিল্পীদের গান নিজের নামে চালিয়েছেন।
সম্প্রতি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) ব্যবহার সঙ্গীত জগতে নতুন ধরনের জালিয়াতির জন্ম দিয়েছে। গত বছর জানা গেছে, বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় মেটাল ব্যান্ডের (metal band) নামে এআই-এর তৈরি করা গান তাদের অজান্তে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে আপলোড করা হয়েছে।
এমনকি, উত্তর ক্যারোলিনার এক ব্যক্তি এআই ব্যবহার করে ‘জাইগোটিক ওয়াশস্ট্যান্ডস’ (Zygotic Washstands) এর মতো উদ্ভট শিরোনামের গান তৈরি করে, যা আসলে কোনো অস্তিত্ব নেই এমন সব ব্যান্ডের গান হিসাবে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এই গানগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে শোনার ব্যবস্থা করে তিনি কোটি টাকা (প্রায় ১,২০০ কোটি টাকা) আয়ের চেষ্টা করেছিলেন।
এসব ঘটনা প্রমাণ করে, প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে সঙ্গীতের জগতে প্রতারণার ধরণও বদলে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে, সম্ভবত এআই-এর ব্যবহার আরও জটিল জালিয়াতির জন্ম দেবে, যেখানে আসল এবং নকলের মধ্যে পার্থক্য করা কঠিন হয়ে পড়বে।
সঙ্গীতের জগতে টিকে থাকতে হলে শিল্পী এবং শ্রোতা উভয়কেই সচেতন থাকতে হবে, যাতে তারা প্রতারণার শিকার না হন।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান