মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক নীতি নিয়ে তাঁর প্রশাসনের অভ্যন্তরেই মতবিরোধ দেখা যাচ্ছে। সম্প্রতি, শীর্ষস্থানীয় সহযোগী হিসেবে পরিচিত ইলন মাস্ক প্রকাশ্যে বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারোর নীতির সমালোচনা করেছেন, যা এই বিভেদকে আরও স্পষ্ট করে তুলেছে।
একদিকে যখন বিশ্বজুড়ে বাজার দরপতন হচ্ছে, তখন ট্রাম্প তাঁর শুল্ক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অনড় রয়েছেন।
গত সপ্তাহে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান তিনটি শেয়ার সূচক – ডাউ জোন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল এভারেজ, এস অ্যান্ড পি ৫০০ এবং নাসডাক – পাঁচ শতাংশের বেশি হ্রাস পেয়েছে। বাজার বিশেষজ্ঞদের মতে, কোভিড-১৯ মহামারীর পর এটিই মার্কিন শেয়ার বাজারের সবচেয়ে বড় দরপতন।
ট্রাম্প সরকারের বাণিজ্য ও উৎপাদন বিষয়ক উপদেষ্টা পিটার নাভারো এক সাক্ষাৎকারে শুল্কের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, বাজার দ্রুত স্থিতিশীল হবে এবং ডাউ জোন্স ট্রাম্পের মেয়াদে ৫০,০০০ পয়েন্টে পৌঁছবে।
অন্যদিকে, ইলন মাস্ক, যিনি স্পেসএক্স এবং টেসলার প্রধান এবং এই দুটি সংস্থার বৃহত্তম শেয়ারহোল্ডার, তিনি হার্ভার্ড থেকে অর্থনীতিতে ডক্টরেট করা নাভারোর সমালোচনা করেছেন। মাস্কের মতে, “হার্ভার্ড থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি করাটা ভালো নয়।”
শনিবার থেকে যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, আর্জেন্টিনা এবং সৌদি আরবের মতো দেশগুলোর উপর ১০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর করা হয়েছে। এর পাশাপাশি, চীন ও ভারতের মতো দেশগুলোর উপরও উচ্চ হারে শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা রয়েছে, যা ট্রাম্প ‘পাল্টা শুল্ক’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
ইলন মাস্ক সম্প্রতি ইতালির উপ-প্রধানমন্ত্রী মাত্তেও সালভিনির সঙ্গে এক ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেন, যেখানে তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের মধ্যে ‘শূন্য শুল্ক’ পরিস্থিতি তৈরির আশা প্রকাশ করেন। উল্লেখ্য, ট্রাম্প এর আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) উপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিলেন।
এই প্রসঙ্গে মাস্কের ব্যবসায়িক স্বার্থের দিকে ইঙ্গিত করে নাভারো বলেছেন, মাস্ক মূলত গাড়ি বিক্রি করেন এবং শুল্ক নিয়ে তাঁর মন্তব্য সম্ভবত ব্যবসার সঙ্গে সম্পর্কিত।
এদিকে, টেসলা মার্কিন সরকারকে সতর্ক করে জানিয়েছে, শুল্কের কারণে বৈদ্যুতিক গাড়ির কোম্পানিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কোম্পানিটি এক চিঠিতে জানায়, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়া হিসেবে অন্যান্য দেশগুলিও শুল্ক বাড়ালে, মার্কিন রপ্তানিকারকদের উপর অসামঞ্জস্যপূর্ণ প্রভাব পড়তে পারে।”
গত ২৬শে মার্চ, ট্রাম্প গাড়ির যন্ত্রাংশ সহ গাড়ির আমদানির উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন। এর প্রতিক্রিয়ায় মাস্ক টুইটারে লেখেন, “মনে রাখতে হবে, টেসলাও এখানে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। টেসলার উপর শুল্কের প্রভাব উল্লেখযোগ্য।”
মার্কিন বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড ল্যাটনিক জানিয়েছেন, ১০ শতাংশের প্রাথমিক শুল্ক কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত বহাল থাকবে এবং উচ্চ হারে পাল্টা শুল্কও কার্যকর করা হবে। একই সময়ে, ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট জানিয়েছেন, ৫০টিরও বেশি দেশ শুল্ক হ্রাসের জন্য আলোচনা করতে ওয়াশিংটনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।
অন্যদিকে, সিএনএনের একটি অনুষ্ঠানে কৃষি সচিব ব্রুক রোলিন্সকে যখন জিজ্ঞাসা করা হয়, শুল্কগুলি কি বহাল থাকবে, যেমনটা ট্রাম্প ও ল্যাটনিক বলেছেন, তিনি সরাসরি এর উত্তর দেননি।
এই ঘটনাগুলো থেকে স্পষ্ট যে, ট্রাম্পের শুল্ক নীতি নিয়ে তাঁর প্রশাসনের মধ্যে ভিন্নমত রয়েছে, যা বিশ্ব অর্থনীতি এবং বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর বাণিজ্য সম্পর্কে নতুন করে ভাবতে উৎসাহিত করছে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা