এলোন মাস্ক, যিনি টেসলা এবং স্পেসএক্সের মতো বৃহৎ কোম্পানির মালিক, সম্প্রতি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বিশ্বব্যাপী শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার জন্য ব্যক্তিগতভাবে অনুরোধ করেছিলেন। তবে ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে কোনো পরিবর্তন আসেনি, বরং তিনি চীনের উপর আরও শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন।
এই ঘটনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট এবং বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী ব্যক্তির মধ্যে সম্পর্কের অবনতির ইঙ্গিত দেয়।
জানা গেছে, মাস্ক বেশ কয়েকবার ট্রাম্পের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করে বাণিজ্য নীতি পরিবর্তনের জন্য চেষ্টা করেন। গত সপ্তাহে ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের উপর শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়ার পরেই মাস্ক এই পদক্ষেপ নেন।
এই শুল্কের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিরতা দেখা দেয় এবং শেয়ার বাজারেও বড় ধরনের দরপতন হয়, যার ফলে অনেক কোম্পানির হাজার হাজার কোটি ডলার ক্ষতি হয়েছে। মাস্ক নিজেও এই শুল্ক নীতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, কারণ তার ব্যক্তিগত সম্পদের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।
অর্থনীতিবিদ, রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং এমনকি রিপাবলিকান দলের কিছু সদস্যও ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন। একটি রক্ষণশীল গোষ্ঠী এই শুল্ককে “অবৈধ” আখ্যা দিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে।
মাস্ক নিজেও এই নীতির বিরোধিতা করে প্রকাশ্যে ট্রাম্পের বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারোর সমালোচনা করেছেন। মাস্ক ইতালিতে অনুষ্ঠিত একটি সম্মেলনে বক্তব্য দেওয়ার সময় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে শুল্কমুক্ত বাণিজ্য চালুর পক্ষে মত দেন।
এদিকে, মাস্কের সরকারি পদে থাকা এবং একইসঙ্গে নিজের ব্যবসায়িক স্বার্থ রক্ষার বিষয়টিও বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। ডেমোক্রেটিক কংগ্রেসম্যান জেরাল্ড কনলি এবং ম্যাক্সওয়েল ফ্রস্ট নাসার প্রধান আইন কর্মকর্তার কাছে স্পেসএক্সের সঙ্গে হওয়া সরকারি চুক্তিগুলোর বিস্তারিত তথ্য চেয়েছেন।
তাঁদের অভিযোগ, মাস্ক সরকারি পদে থেকে তাঁর ব্যবসার সুবিধা নিচ্ছেন, যা স্বার্থের সংঘাত তৈরি করছে। নাসা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে স্পেসএক্সের চুক্তি প্রায় ৩৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের।
অন্যদিকে, মাস্ক যখন সরকারি পদে ছিলেন, তখন টেসলার বিক্রি কমে যায়। এমনকি তাঁর রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে টেসলার বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ ও ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে।
সম্প্রতি, ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) টেসলার বিক্রয় কেন্দ্র এবং চার্জিং স্টেশনে সহিংসতার ঘটনা তদন্তের জন্য একটি বিশেষ দল গঠন করেছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মাস্ক এবং ট্রাম্পের মধ্যে এই বিভেদ সম্ভবত বন্ধুত্বপূর্ণভাবে মিটমাট হয়ে যাবে। কারণ ট্রাম্প এখনো মাস্কের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখতে আগ্রহী।
তবে, এই ঘটনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতি এবং এর সম্ভাব্য প্রভাব সম্পর্কে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান