রমজানে ট্যাটু মুছে ফেলতে মুসলিমদের ঢল!

রমজান মাসে ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় বিনামূল্যে ট্যাটু অপসারণ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। দেশটির অনেক মুসলমান এই উদ্যোগে অংশ নিচ্ছেন এবং তাদের শরীরে আঁকা ট্যাটু অপসারণ করছেন।

এর কারণ হিসেবে তারা বলছেন, ইসলামের পথে ফিরে আসাই তাদের মূল লক্ষ্য।

ইসলামিক দাতব্য সংস্থা ‘আমিল যাকাত ন্যাশনাল এজেন্সি’ এই বিশেষ কর্মসূচিটি পরিচালনা করছে। ২০১৯ সাল থেকে রমজান মাস জুড়ে এই কার্যক্রম চলছে।

এবার প্রায় ৭০০ জন এই সেবা গ্রহণের জন্য নাম লিখিয়েছেন। সবমিলিয়ে এ পর্যন্ত প্রায় ৩ হাজার মানুষ এই সুবিধা নিয়েছেন।

মোহাম্মদ আসেপ ওয়াহিউদি, যিনি এই কর্মসূচির সমন্বয়ক, জানিয়েছেন, ‘আমরা তাদের জন্য একটি পথ তৈরি করতে চাই, যারা আল্লাহর পথে ফিরে আসতে চান।

তাদের মধ্যে ট্যাটু অপসারণ করতে ইচ্ছুক ব্যক্তিরাও রয়েছেন।’ তিনি আরও জানান, অনেক মানুষের পক্ষে ট্যাটু অপসারণের ব্যয়বহুল চিকিৎসা করানো সম্ভব হয় না।

এছাড়া, কোথায় এবং কিভাবে নিরাপদে এই কাজটি করানো যায়, সে সম্পর্কেও অনেকের ধারণা নেই।

লেজার চিকিৎসার মাধ্যমে ট্যাটু অপসারণ করতে বেশ কয়েকবার সেশন লাগে। এই পদ্ধতিতে ব্যাপক খরচ হতে পারে, যা অনেকের জন্য একটি উদ্বেগের কারণ।

ইন্দোনেশিয়ার সমাজে ট্যাটুকে সাধারণত অপরাধ এবং গ্যাং কালচারের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। শুধু তাই নয়, ট্যাটুর কারণে নারীদের প্রতি নেতিবাচক ধারণা পোষণ করা হয়।

অনেক ক্ষেত্রে তাদের চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয় এবং বিয়ের অযোগ্য মনে করা হয়।

তেগুহ ইসলিয়ান সেপতুরা নামের এক ব্যক্তি জানান, তিনি এক সময় একটি ব্যান্ডে গিটার বাজাতেন, তখন ‘কুল’ দেখানোর জন্য শরীরে ট্যাটু করেছিলেন।

তবে এখন তিনি ইসলাম ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছেন এবং নিজের ভুল বুঝতে পেরেছেন। তিনি বলেন, ‘মানুষ হিসেবে আমরা ভুল করি।

এখন আমি আল্লাহর কাছাকাছি যেতে চাই এবং নিজেকে শুধরাতে চাই।’

আরেকজন নারী, শ্রী ইন্দ্রিয়াতি, ২২ বছর বয়সে মেয়ের জন্মের পর তার নাম হাতে ট্যাটু করেছিলেন। তিনি জানান, তার দুই নাতি প্রায়ই তাকে এই ট্যাটু মুছে ফেলতে বলে।

তাদের চোখে এটা ময়লা এবং খারাপ লাগে। তিনি বলেন, ‘আমি যখন নাতিকে স্কুলে নিয়ে যাই, তখন অন্য শিশুরা ফিসফিস করে বলে, ঐ দেখ, ওই নারীর ট্যাটু আছে!’

এভালিয়া জাদোরা নামের এক নারী জানান, একসময় গ্যাংয়ের সদস্য হওয়ার জন্য তিনি পিঠে একটি বড় তারা এবং বুকে ‘হোপ, লাভ অ্যান্ড রক অ্যান্ড রোল’ লিখে ট্যাটু করেছিলেন।

এখন তিনি আল্লাহর পথে ফিরে আসতে চান এবং পরিবারের কথা ভেবে এগুলো অপসারণ করতে চান। এভালিয়া বলেন, ‘ট্যাটু নিয়ে খারাপ ধারণা আমার কাছে মুখ্য নয়, তবে এর কারণে আমার স্বামী ও ছেলের অস্বস্তি হয়।

আমি তাদের অনুভূতির প্রতি সম্মান জানাই, তাই এটা মুছে ফেলতে চাই।’

রমজান মাসে এমন একটি মহৎ উদ্যোগ নিঃসন্দেহে অনেক মানুষের জন্য আলোর পথ দেখাচ্ছে। যারা নিজেদের ভুল শুধরে নিতে চান, তাদের জন্য এই ধরনের সুযোগ তৈরি করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *