মায়ানমারে ভূমিকম্পের পর বাগান অঞ্চলের প্রাচীন মন্দিরগুলোর ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
বাগান, যা একসময় বার্মা নামে পরিচিত ছিল, সেখানে অবস্থিত কয়েক হাজার বৌদ্ধ মন্দির ও প্যাগোডার কারণে বিশ্বজুড়ে পরিচিতি লাভ করেছে। ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানটি একাদশ শতকে নির্মিত হয়েছিল এবং এটি মায়ানমারের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান।
ভোরবেলার কুয়াশার মধ্যে ২০০ ফুটের বেশি উঁচু মন্দিরগুলোর দৃশ্য ভ্রমণকারীদের মুগ্ধ করে তোলে। স্কটিশ সাংবাদিক এবং ঔপনিবেশিক প্রশাসক জেমস জর্জ স্কট ১৯১০ সালে লিখেছিলেন, “জেরুজালেম, রোম, কিয়েভ বা বেনারস—এগুলোর কোনোটিই বাগণের মতো এত বেশি মন্দির এবং নকশা ও অলংকারের প্রাচুর্য দাবি করতে পারে না।
সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের ফলে এই ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোর ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশেষ করে, ২০১১ সালের ভূমিকম্পে মন্দিরগুলোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল। লন্ডনের SOAS বিশ্ববিদ্যালয়ের এশীয় শিল্পের শিক্ষক ড. স্টিফেন মারফি জানিয়েছেন, এবারের ভূমিকম্পে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা এখনো নিশ্চিত নয়।
বাগান শহরটি ইরাবতী নদীর তীরে অবস্থিত এবং এটি একসময় বার্মিজ সাম্রাজ্যের প্রথম রাজধানী ছিল। এখানকার মন্দিরগুলো একসময় বিশাল এক বৌদ্ধ সাম্রাজ্যের প্রতীক হিসেবে পরিচিত ছিল।
কথিত আছে, বাগণের প্রতিষ্ঠাতা আনাওরাথা মিনসাও যুদ্ধ জয়ের পর কারুশিল্পী, চিত্রকর, এবং অন্যান্য দক্ষ শ্রমিকদের এখানে নিয়ে আসেন, যারা এই মন্দিরগুলো নির্মাণ করেন।
ঐতিহাসিক সূত্রে জানা যায়, এখানে ১০,০০০ এর বেশি ধর্মীয় স্থাপনা তৈরি করা হয়েছিল, যার অনেকগুলোতে জটিল কারুকার্য ছিল।
১৯৯০-এর দশকে সামরিক শাসনের সময় কিছু সংস্কার করা হলেও, ভূমিকম্প তাদের তেমন ক্ষতি করতে পারেনি। ২০১৯ সালে ইউনেস্কো বাগানকে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা করে।
রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সহিংসতার কারণে গত ২০ বছরে বিদেশি পর্যটকদের সংখ্যা কমে গেছে। তবে, স্থানীয়দের কাছে এই স্থান আজও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ২০২৩ সালে এখানে প্রায় ৪ লক্ষাধিক পর্যটকের সমাগম হয়েছিল।
SOAS-এর দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় শিল্পের অধ্যাপক অ্যাশলে থম্পসন বলেছেন, “অতীতে রাজনৈতিক সহিংসতার শিকার হওয়া মানুষের জন্য বাগণের সমৃদ্ধ অতীতের স্মৃতি আশা জাগায়।
এটি তাদের কাছে এক ধরণের অনুপ্রেরণা।
বাগান অঞ্চলে মিয়াজেদি লিপিও রয়েছে, যা প্রাচীন বার্মিজ ভাষার প্রথম উদাহরণ হিসেবে পরিচিত। এই স্তম্ভটি ১১১৩ সালের এবং এটিকে বার্মিজ ‘রোসেটা স্টোন’ও বলা হয়।
ঐতিহাসিক বা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। বাগণের মন্দিরগুলোর সম্ভাব্য ক্ষতি জীবনহানির তুলনায় হয়তো কম, কিন্তু এর প্রভাব মায়ানমারের মানুষের জীবনে দীর্ঘস্থায়ী হবে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান