মিয়ানমারে ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর মৃতের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। দেশটির মধ্যাঞ্চলে শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানার পর উদ্ধারকর্মীরা এখনো ধ্বংসস্তূপের মধ্যে আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছেন।
একইসঙ্গে, প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ডেও ভূমিকম্পের প্রভাব পড়েছে, যেখানে একটি নির্মাণাধীন বহুতল ভবন ধসে পড়েছে।
শুক্রবার দুপুরের দিকে ৭.৭ মাত্রার ভূমিকম্পটি আঘাত হানে, যার কেন্দ্রস্থল ছিল মিয়ানমারের মান্দালয় শহরের কাছে। এরপর ৬.৭ মাত্রার একটি পরাঘাত (aftershock) অনুভূত হয়।
ভূমিকম্পের কারণে বহু ভবন ধসে পড়েছে, রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং সেতু ভেঙে গেছে। দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়ে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চলেছে।
উদ্ধারকর্মীরা জানিয়েছেন, ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো বহু মানুষ আটকা পড়ে আছেন। উদ্ধারকাজে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাব দেখা দিয়েছে, যার ফলে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের ছোট ছোট দল স্বেচ্ছায় উদ্ধারকাজে অংশ নিচ্ছেন, তবে ভারী যন্ত্রপাতির অভাবে তাদের পক্ষে কাজ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
মান্দালয়ের একটি চায়ের দোকানের মালিক উইন লিন জানিয়েছেন, ভূমিকম্পের সময় একটি রেস্টুরেন্ট ধসে পড়ে, যেখানে প্রায় সাতজনের মৃত্যু হয়েছে।
তিনি আরও মরদেহ খুঁজছেন, তবে সেখানে আর জীবিত কাউকে পাওয়ার সম্ভাবনা নেই।
এদিকে, ভূমিকম্পের কারণে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা জরুরি ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক সাহায্য চেয়েছে। অতীতে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় বিদেশি সাহায্য গ্রহণে তারা অনীহা দেখালেও, এবার পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনা করে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় জরুরি চিকিৎসা সামগ্রীর তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। রাস্তাঘাটের ক্ষতির কারণে ত্রাণ সরবরাহও ব্যাহত হচ্ছে।
ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের কাছে অবস্থিত সাগাইং শহরে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চলেছে। সেখানকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, তারা এখনো পর্যন্ত কোনো সাহায্য পাননি।
বিদ্যুৎ ও খাবার পানিরও সংকট দেখা দিয়েছে।
মিয়ানমারে চলমান গৃহযুদ্ধের কারণে বাস্তুচ্যুত প্রায় ৩৫ লক্ষ মানুষ ভূমিকম্পের শিকার হয়েছে। তাদের অনেকেই খাদ্য সংকটে ভুগছে।
এই পরিস্থিতিতে ভূমিকম্প তাদের দুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
আন্তর্জাতিক সাহায্য আসতে শুরু করেছে। ভারত এরই মধ্যে বিমান ও নৌবাহিনীর মাধ্যমে ত্রাণ ও উদ্ধারকারী দল পাঠিয়েছে।
চীন থেকেও উদ্ধারকর্মী দল এসেছে। সিঙ্গাপুর থেকে আসা ৭৮ সদস্যের একটি দলও উদ্ধারকাজে অংশ নিচ্ছে।
অন্যদিকে, থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককেও একটি নির্মাণাধীন বহুতল ভবন ধসে পড়েছে। সেখানে আটকা পড়া শ্রমিকদের উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।
ব্যাংকক মেট্রোপলিটন অথরিটির তথ্য অনুযায়ী, এই ঘটনায় ৩২ জন আহত হয়েছেন এবং ৮৩ জন এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।
ভূমিকম্পের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলো মেরামতের জন্য প্রকৌশলীদের মোতায়েন করা হয়েছে। উদ্ধারকর্মীরা ধ্বংসস্তূপের নিচে জীবিতদের খুঁজে বের করার জন্য স্নিফার কুকুর এবং থার্মাল ইমেজিং ড্রোন ব্যবহার করছেন।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান