মিয়ানমারে ভয়াবহ ভূমিকম্প: মৃতের সংখ্যা ১,৭০০ ছাড়িয়েছে, মানবিক বিপর্যয়।
গত শুক্রবার, ২০২৩ সালের ২৮শে মার্চ, মিয়ানমারে ৭.৭ মাত্রার এক শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। ভূমিকম্পটির কেন্দ্রস্থল ছিল দেশটির মধ্যাঞ্চলে এবং এর ফলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
সোমবার পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী, ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ১,৭০০ ছাড়িয়ে গেছে। আহতের সংখ্যা ৩,৪০০ এর বেশি এবং এখনো নিখোঁজ রয়েছেন ৩০০ জনের বেশি।
ভূমিকম্পটি দেশটির রাজধানী নেপিদো এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালেও আঘাত হেনেছে। এর ফলে বহু ভবন ধসে পড়েছে এবং অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
ভূমিকম্পের সময় অনেক মানুষ তাদের ধর্মীয় স্থানে ছিলেন, বিশেষ করে রমজান মাসের কারণে অনেক মুসলমান মসজিদে নামাজ পড়ছিলেন। জানা গেছে, প্রায় ৬০টি মসজিদ হয় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, না হয় ধ্বংস হয়ে গেছে।
মান্দালায় অবস্থিত একটি বৌদ্ধ মঠের ভেতরেও ভূমিকম্পের কারণে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।
ভূমিকম্পের পর উদ্ধারকর্মীরা ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধারের চেষ্টা করছেন। তবে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়া এবং দুর্গম অঞ্চলের কারণে অনেক এলাকার পরিস্থিতি এখনো অজানা।
আন্তর্জাতিক উদ্ধারকারী দলগুলোও তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। ভারত, রাশিয়া, চীন, এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে আসা দলগুলো ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় উদ্ধার ও ত্রাণকাজে অংশ নিচ্ছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া সহ বিভিন্ন দেশ আর্থিক সাহায্য ঘোষণা করেছে।
মান্দালায় একটি নির্মাণাধীন ভবনে কাজ করার সময়ও ভূমিকম্প আঘাত হানে, যেখানে বহু শ্রমিক হতাহত হন। থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককেও ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে, যেখানে একটি নির্মাণাধীন ভবন ধসে পড়লে ১৮ জন নিহত এবং অনেকে আহত হন।
ভূমিকম্পের কারণে মিয়ানমারে মানবিক সংকট আরও গভীর হয়েছে। দেশটির অভ্যন্তরে চলা রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং সশস্ত্র সংঘাতের কারণে ত্রাণ কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
জাতিসংঘের তথ্যমতে, বর্তমানে প্রায় ২০ মিলিয়ন মানুষ মানবিক সহায়তার প্রয়োজনীয়তার মধ্যে রয়েছেন। ভূমিকম্পের ফলে বাস্তুহারা মানুষের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে।
ভূমিকম্পের তীব্রতা এবং ধ্বংসযজ্ঞের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে খাদ্য, আশ্রয় এবং চিকিৎসা সেবার অভাব দেখা দিয়েছে। উদ্ধারকর্মীদের জন্য ভারী সরঞ্জামের অভাব একটি বড় সমস্যা, যার কারণে ম্যানুয়ালি ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে জীবিতদের উদ্ধারের কাজ ধীর গতিতে চলছে।
ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের প্রতি গভীর সহানুভূতি জানাচ্ছি। এই কঠিন সময়ে বাংলাদেশের মানুষ হিসেবে আমরা তাদের পাশে আছি।
আপনারা চাইলে ত্রাণ ও সাহায্য পাঠানোর মাধ্যমে মিয়ানমারের দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারেন।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস