মিয়ানমারে ভয়াবহ ভূমিকম্প, ধ্বংসস্তূপে আটকা পড়া নারীকে জীবিত উদ্ধার।
মিয়ানমারের মধ্যাঞ্চলে আঘাত হানা শক্তিশালী ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। শুক্রবারের এই ভূমিকম্পে দেশটির ১,৭০০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। প্রতিবেশী থাইল্যান্ডেও ১৮ জন নিহত হয়েছে।
উদ্ধারকর্মীরা এখনও ধ্বংসস্তূপের মধ্যে আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
সোমবার দেশটির মান্দালাই শহরে একটি হোটেলের ধ্বংসস্তূপ থেকে প্রায় ৬০ ঘণ্টা পর একজন নারীকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। চীনা দূতাবাসের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, উদ্ধারকারীরা পাঁচ ঘণ্টার চেষ্টায় গ্রেট ওয়াল হোটেলের ধ্বংসস্তূপ থেকে ওই নারীকে বের করে আনে।
খবরটি ছড়িয়ে পড়ার পর স্বজন ও স্থানীয়দের মধ্যে স্বস্তি নেমে আসে।
উদ্ধার হওয়া নারীর অবস্থা স্থিতিশীল বলে জানা গেছে। উদ্ধারকর্মীরা তাকে দ্রুত হাসপাতালে পাঠিয়েছেন।
ধ্বংসস্তূপ থেকে জীবিত উদ্ধারের এমন ঘটনা সত্যিই বিরল। ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন স্থানে উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
বহু ঘরবাড়ি, ধর্মীয় স্থান, স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয়, হোটেল এবং হাসপাতাল হয় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, না হয় সম্পূর্ণ ধসে পড়েছে।
মান্দালাই শহরে একটি অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সে আটকে পড়া এক অন্তঃসত্ত্বা নারীকে উদ্ধারের জন্য দু’দিন পর তাঁর পা কেটে ফেলতে হয়।
তবে উদ্ধারের কিছুক্ষণ পরই তাঁর মৃত্যু হয়। এই ১২ তলা ভবনের নিচে আরও অনেকে আটকা পড়ে আছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এদিকে, ভূমিকম্পে উদ্ধারকাজে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাবে বেগ পেতে হচ্ছে উদ্ধারকর্মীদের। অনেক ক্ষেত্রে খালি হাতেই ধ্বংসস্তূপ সরানোর চেষ্টা করছেন তাঁরা।
বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় এবং রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় উদ্ধারকাজ আরও কঠিন হয়ে পড়েছে।
মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ১০,০০০ ছাড়িয়ে যেতে পারে এবং ক্ষতির পরিমাণ দেশটির বার্ষিক অর্থনৈতিক উৎপাদনের চেয়েও বেশি হতে পারে।
ভূমিকম্পের পর মিয়ানমারের সামরিক জান্তা আন্তর্জাতিক সাহায্য চেয়েছিল। এরপর চীন ও রাশিয়া তাদের উদ্ধারকর্মী ও ত্রাণ পাঠিয়েছে।
ভারত, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া এবং সিঙ্গাপুরও সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও মানবিক সহায়তা হিসেবে প্রায় ২১ কোটি টাকার বেশি অর্থ সাহায্য করার ঘোষণা দিয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকেই মিয়ানমারে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে।
বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, এই পরিস্থিতিতে ত্রাণ বিতরণে স্বচ্ছতা আনা জরুরি।
মিয়ানমারের বর্তমান শাসকগোষ্ঠী সাহায্যকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান