মিয়ানমারে ভূমিকম্প: ধ্বংসস্তূপের নীচে চাপা পড়া মানুষের কান্না!

বিধ্বংসী ভূমিকম্পে বিপর্যস্ত মিয়ানমার: উদ্ধারকাজে চরম সংকট।

গত শুক্রবার মধ্য মিয়ানমারে আঘাত হানা শক্তিশালী ভূমিকম্পে (Earthquake) মৃতের সংখ্যা বাড়ছেই। ভূমিকম্পের কারণে সাগাইং অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

বিধ্বস্ত হয়েছে বহু ঘরবাড়ি ও সরকারি বিভিন্ন কার্যালয়। উদ্ধারকর্মীরা ধ্বংসস্তূপের মধ্যে আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে, প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাব এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে।

ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল সাগাইং প্রদেশে উদ্ধারকর্মীদের পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দারাও উদ্ধারকাজে অংশ নিচ্ছেন। কিন্তু তাদের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও জনবলের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।

ধ্বংসস্তূপ সরানোর মতো পর্যাপ্ত ক্রেন নেই, আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ঔষধ ও চিকিৎসা সামগ্রীরও অভাব রয়েছে। স্থানীয় একজন বাসিন্দা জানান, “আমরা এখনো কোনো সাহায্য পাইনি, ইন্টারনেট ও ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। বর্তমানে শুধু স্থানীয় বাসিন্দারাই উদ্ধার কাজ চালাচ্ছেন। আমাদের আরও উদ্ধারকর্মী প্রয়োজন।”

সাগাইংয়ের হাসপাতালগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রোগীদের খোলা আকাশের নিচে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। তীব্র গরমের কারণে তাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

আহতদের মধ্যে অনেকের হাত-পা ভেঙে গেছে এবং মাথায় গুরুতর আঘাত লেগেছে। পুরনো রোগে আক্রান্ত রোগীদের অবস্থা আরও খারাপ।

মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর ম্যান্ডালেও (Mandalay) ভূমিকম্পের প্রভাব পড়েছে। সেখানকার হাসপাতালগুলোতে আহত রোগীদের উপচে পড়া ভিড়।

গুরুতর আহত রোগীদের চিকিৎসার জন্য অন্যান্য স্থান থেকে পর্যাপ্ত সরঞ্জাম পাওয়া যাচ্ছে না। সেখানকার একজন চিকিৎসক জানান, “আমি জীবনে অনেক কিছুই দেখেছি, কিন্তু এমন ব্যস্ততা আগে দেখিনি। পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ।”

জাতিসংঘ (UN) জানিয়েছে, ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য জরুরি চিকিৎসা সামগ্রীর তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ট্রমা কিট, রক্তের ব্যাগ, এনেস্থেসিয়া, জরুরি ঔষধ এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য তাঁবু।

উদ্ধারকর্মীরা জানিয়েছেন, ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো বহু মানুষ আটকা পড়ে আছেন। তাদের জীবিত উদ্ধারের সম্ভাবনা খুবই কম।

সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়াদের মধ্যে অনেক শিশুও রয়েছে।

এই কঠিন পরিস্থিতিতে উদ্ধারকর্মীদের কাজ আরও কঠিন করে তুলেছে মিয়ানমারের রাজনৈতিক অস্থিরতা। ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে দেশটিতে গৃহযুদ্ধ চলছে।

সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করছে বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠী। বিভিন্ন স্থানে সামরিক বাহিনীর বিমান হামলার কারণে উদ্ধার কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। অনেক উদ্ধারকর্মী আতঙ্কে সাহায্য করতে সাহস পাচ্ছেন না।

মিয়ানমারের এই ভয়াবহ দুর্যোগে বাংলাদেশের জনগণের প্রতি সহানুভূতি রয়েছে। অতীতে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাংলাদেশের মানুষ একে অপরের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং আন্তর্জাতিক সাহায্যও পাওয়া গেছে।

মিয়ানমারের এই কঠিন সময়ে বাংলাদেশের মানুষ তাদের পাশে আছে এবং ত্রাণ ও উদ্ধার কার্যক্রমে সহায়তার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।

তথ্য সূত্র: বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *