মর্মান্তিক! ভূমিকম্পে মিয়ানমারে মৃতের সংখ্যা ২,৭০০ ছাড়াল, কান্নার রোল

মায়ানমারে ভয়াবহ ভূমিকম্প: মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৭০০ ছাড়িয়েছে, উদ্ধার কাজে বাধা, মানবিক বিপর্যয়

ভয়াবহ ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত মায়ানমারে মৃতের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, মৃতের সংখ্যা ২৭০০ ছাড়িয়ে গেছে। ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে খাদ্য, জল ও আশ্রয়ের অভাবে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল দেশটির মধ্যাঞ্চলে এবং এর মাত্রা ছিল ৭.৭। ভয়াবহ এই ভূমিকম্পে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মান্দালয় শহর।

শুক্রবার দুপুরের দিকে আঘাত হানা ভূমিকম্পটি গত এক শতাব্দীর মধ্যে মায়ানমারে আঘাত হানা সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প ছিল। এতে প্রাচীন প্যাগোডা থেকে শুরু করে আধুনিক ভবন পর্যন্ত সবই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

মঙ্গলবার দেশটির সামরিক জান্তা সরকারের প্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং এক ভাষণে জানান, মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২,৭১৯ জনে দাঁড়িয়েছে এবং এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। ভূমিকম্পে আহত হয়েছেন ৪,৫২১ জন এবং এখনো ৪৪১ জন নিখোঁজ রয়েছেন।

প্রতিবেশী থাইল্যান্ডেও অন্তত ২০ জন নিহত হয়েছে।

ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল মান্দালয়ে স্থানীয় সময় দুপুর ১টা ৫১ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় দুপুর ১টা ২০ মিনিট) নিহতদের প্রতি সম্মান জানিয়ে এক মিনিটের নীরবতা পালন করা হয়। এসময় শহরের আকাশচুম্বী ভবনগুলোর ধ্বংসস্তূপের পাশে উদ্ধারকর্মীরা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।

ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়া জীবিতদের উদ্ধারের চেষ্টা এখনো চলছে, তবে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে তা কঠিন হয়ে পড়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, তারা এখনো খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন। ভূমিকম্পে তাদের ঘরবাড়ি হয় ধ্বংস হয়ে গেছে, নয়তো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ভূমিকম্পের পর থেকে তারা চরম আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। ভূমিকম্পের কারণে অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।

খাবার ও পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।

এদিকে, ভূমিকম্পের ত্রাণ ও উদ্ধার কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে দেশটির চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও গৃহযুদ্ধের কারণে।

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলো জানিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ত্রাণ সরবরাহ করতে চরম বেগ পেতে হচ্ছে। সামরিক বাহিনীর বাধার কারণে অনেক স্থানে সাহায্য পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না।

জাতিসংঘের মানবিক সংস্থা (OCHA) জানিয়েছে, ভূমিকম্পে নিহতদের মধ্যে মান্দালয়ের একটি প্রি-স্কুলের ৫০ জন শিশু ও ২ জন শিক্ষকও রয়েছেন।

এছাড়া, ভূমিকম্পের সময় দেশটির বিভিন্ন মসজিদে নামাজ পড়ারত অবস্থায় প্রায় ৫০০ মুসলিম ধর্মাবলম্বীর মৃত্যু হয়েছে।

অন্যদিকে, থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে একটি নির্মাণাধীন বহুতল ভবনের ধ্বংসস্তূপ থেকে জীবিতদের উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। তবে ভূমিকম্পের চার দিন পার হয়ে যাওয়ায় সেখানে জীবিত কাউকে পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে আসছে।

উদ্ধারকর্মীরা জানিয়েছেন, ভবনের নিচে প্রায় ৭০ জনের মরদেহ রয়েছে।

ভূমিকম্পের ফলে সৃষ্ট এই মানবিক বিপর্যয়ে বাংলাদেশের মানুষের সহানুভূতি রয়েছে। অতীতে বাংলাদেশেও প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়।

মায়ানমারের এই কঠিন সময়ে বাংলাদেশের সরকার ও বিভিন্ন সাহায্য সংস্থাও ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতে প্রস্তুত।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *