মায়ানমারে ভূমিকম্প: মৃতের সংখ্যা আড়াই হাজারের বেশি, বাড়ছে মানবিক বিপর্যয়।
গত শুক্রবার দুপুরে ৭.৭ মাত্রার এক শক্তিশালী ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে মায়ানমার। ভূমিকম্পের ফলে দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে। মৃতের সংখ্যা আড়াই হাজারের বেশি ছাড়িয়ে গেছে।
ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধারে এখনো চেষ্টা চলছে, তবে সময় যত গড়াচ্ছে, জীবিত উদ্ধারের সম্ভাবনা ততই ক্ষীণ হয়ে আসছে।
ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল মায়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়ের কাছে। ভূমিকম্পের কারণে দেশটির অনেক অঞ্চলের সঙ্গে বিদ্যুৎ ও টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
রাস্তাঘাট ও সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় দুর্গত এলাকাগুলোতে ত্রাণ ও উদ্ধারকর্মীদের পৌঁছাতে বেগ পেতে হচ্ছে। ভূমিকম্পে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মান্দালয় এবং রাজধানী শহর নেপিদো।
উদ্ধারকর্মীরা মঙ্গলবার নেপিদোতে একটি ভবন থেকে ৬৩ বছর বয়সী এক নারীকে জীবিত উদ্ধার করেছেন। ভূমিকম্পের প্রায় ৯১ ঘণ্টা পর তাকে ধ্বংসস্তূপ থেকে বের করা হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভূমিকম্পের পর ৭২ ঘণ্টার বেশি সময় পার হয়ে গেলে জীবিত উদ্ধারের সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়।
মায়ানমারের সামরিক সরকারের প্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইং জানিয়েছেন, ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত ২ হাজার ৭১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন ৪ হাজার ৫২১ জন এবং এখনো ৪৪১ জন নিখোঁজ রয়েছেন।
তবে হতাহতের সংখ্যা আরও অনেক বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ভূমিকম্পের আগে থেকেই মায়ানমারে প্রায় ৩০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত অবস্থায় ছিল এবং প্রায় ২ কোটি মানুষের মানবিক সহায়তা প্রয়োজন ছিল।
ভূমিকম্পের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মানুষের জন্য খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও চিকিৎসা সামগ্রীর তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এছাড়া, বর্ষা মৌসুম আসন্ন হওয়ায় আশ্রয়হীন মানুষেরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।
মান্দালয়ে উদ্ধারকর্মীরা এখন পর্যন্ত ৪০৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছেন এবং ২৫৯ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
একটি বৌদ্ধ বিহারের ভেতর ধর্মীয় পরীক্ষায় অংশ নেওয়া প্রায় ৫০ জন সন্ন্যাসীর মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও, ধারণা করা হচ্ছে, ওই বিহারের ধ্বংসস্তূপে এখনো প্রায় ১৫০ জন আটকা পড়ে আছেন।
ভূমিকম্পে প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ডও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাজধানী ব্যাংককে একটি নির্মাণাধীন বহুতল ভবন ধসে পড়ার ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২১ জন নিহত এবং ৩৪ জন আহত হয়েছেন।
মায়ানমারের এই ভয়াবহ দুর্যোগের মধ্যে উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতা কিছুটা ধীর গতিতে চলছে। অনেক স্থানে ভারী যন্ত্রপাতি ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাব দেখা যাচ্ছে।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দেশ থেকে ত্রাণ সহায়তা আসতে শুরু করলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। চীন, রাশিয়া, ভারত, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশের উদ্ধারকারী দল ইতিমধ্যে সেখানে পৌঁছেছে।
ভূমিকম্পের কারণে সৃষ্ট এই মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে মায়ানমারে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা পরিস্থিতিকে আরও কঠিন করে তুলেছে।
২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে দেশটিতে গৃহযুদ্ধ চলছে। সামরিক বাহিনীর সঙ্গে বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সংঘর্ষের কারণে ত্রাণকর্মীদের দুর্গত এলাকাগুলোতে পৌঁছাতে সমস্যা হচ্ছে।
মানবিক সহায়তা বিতরণে সামরিক জান্তার বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ দূত টম অ্যান্ড্রুজ এক্সে (সাবেক টুইটার) দেওয়া এক বার্তায় বলেছেন, “মায়ানমারে জীবন বাঁচানোই এখন প্রধান বিষয়, জীবন কেড়ে নেওয়া নয়।”
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মায়ানমারের জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং বিভিন্ন দেশ ত্রাণ সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে, সংকট মোকাবিলায় সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস