মিয়ানমারে শক্তিশালী ভূমিকম্প: ধ্বংসস্তূপে পরিণত মান্দালয়, বাড়ছে মৃতের সংখ্যা।
শুক্রবার মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়ে ৭.৭ মাত্রার এক শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। এর কিছু সময় পরেই ৬.৪ মাত্রার একটি আফটারশক অনুভূত হয়।
ভূমিকম্পের ফলে শহরের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ভেঙে পড়েছে হাসপাতাল, মসজিদ, হোটেলসহ বহু ভবন। ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে, যাদের উদ্ধারের জন্য চলছে প্রাণপণ চেষ্টা।
ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল মান্দালয় শহর। ভূমিকম্পের কারণে সেখানকার পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে অনেকেই তাদের ঘরবাড়ির পরিবর্তে খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন।
কো কো নামের এক ব্যক্তি জানান, তিনি যখন গাড়ি চালাচ্ছিলেন, তখন দ্বিতীয়বার ভূমিকম্পের কম্পন অনুভব করেন। তিনি বলেন, “রাস্তার পাশে গাড়ি থামানোর সঙ্গে সঙ্গেই দেখি একটি হাসপাতাল ভেঙে পড়ছে।
মুহূর্তেই ধুলোর বিশাল মেঘ তৈরি হয়, যা সিনেমার দৃশ্যের মতো ছিল।”
মান্দালয়ের বিভিন্ন এলাকার দৃশ্য বর্ণনা করতে গিয়ে নাদি নামের একজন জানান, তার ১৮ বছর বয়সী এক আত্মীয় ইমরান মসজিদের ভেতরে নামাজ পড়ছিলেন। ভূমিকম্পের কারণে মসজিদের ভবন সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়ে যায়।
তিনি গুরুতর আহত অবস্থায় সেখান থেকে বের হতে পারলেও পরে মারা যান। নাদি আরও জানান, ওই এলাকার আরও একটি মসজিদ এবং একটি হোটেলও ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
হোটেলের তৃতীয় তলা পর্যন্ত ভেঙে পড়েছে এবং সেখানকার কর্মচারী ও মালিক এখনও আটকা পড়ে আছেন।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন ছবিতে ধ্বংসযজ্ঞের ভয়াবহতা দেখা গেছে। মান্দালয় বিশ্ববিদ্যালয়, বিভিন্ন আবাসিক ভবন, রাস্তাঘাট—সবকিছুই হয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, না হয় সম্পূর্ণ ধসে গেছে।
একটি ভিডিওতে দেখা যায়, একটি বিশাল ভবন সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়ছে, আর সন্ন্যাসীরা তা দেখে আতঙ্কে ছুটছেন।
ভূমিকম্পের পর ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যার্থে এগিয়ে এসেছে দেশটির সামরিক জান্তা সরকার। তারা আহতদের চিকিৎসার জন্য রক্তদানের আহ্বান জানিয়েছে।
সরকারি হাসপাতালগুলোতে আহতদের উপচে পড়া ভিড় দেখা যাচ্ছে। রাজধানী নেপিদোতে জরুরি বিভাগের প্রবেশপথ একটি গাড়ির ওপর ভেঙে পড়েছে।
একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, “আমি আগে এমন দৃশ্য দেখিনি। আমরা পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছি, তবে খুব ক্লান্ত হয়ে পড়েছি।”
উল্লেখ্য, ২০২১ সালে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করে সামরিক জান্তা। এরপর থেকেই দেশটির জরুরি পরিষেবাগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে কাজ করা একটি আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ দল, ‘স্পেশাল অ্যাডভাইজরি কাউন্সিল ফর মিয়ানমার’-এর মতে, ভূমিকম্পটি এমন এক সময়ে আঘাত হেনেছে যখন সামরিক জান্তার দমন-পীড়নের কারণে দেশটির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষ দারিদ্র্য ও মানবিক সংকটে জর্জরিত।
সাহায্য কমে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের দুর্ভোগ আরও বেড়েছে।
মান্দালয়ের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, নির্ভরযোগ্য তথ্যের অভাবে তারা বিভিন্ন গুজব ও বিভ্রান্তিকর খবরের শিকার হচ্ছেন। উদ্ধারকর্মীরা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন।
স্থানীয় বাসিন্দারাই এখন নিজেদের সুরক্ষার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছেন। কো কো আরও জানান, “আতঙ্কের কারণে বাসিন্দারা নিজেরাই একটি ফ্লাইওভার বন্ধ করে দিয়েছেন, কারণ তাদের ভয় সেটি ভেঙে পড়তে পারে।”
ভূমিকম্পের পর থেকে এখনো পর্যন্ত একাধিকবার আফটারশক অনুভূত হচ্ছে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান