ধ্বংসস্তূপ থেকে জীবিত উদ্ধার, ভূমিকম্পে ত্রাণের আশায় বুক বাঁধছে মায়ানমার!

মিয়ানমারে ভূমিকম্প: ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়া ব্যক্তিকে উদ্ধার, ত্রাণ কার্যক্রমে সংকট।

গত শুক্রবার দুপুরে মিয়ানমারে আঘাত হানে ৭.৭ মাত্রার শক্তিশালী এক ভূমিকম্প। এতে দেশটির রাজধানীসহ বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

ভূমিকম্পের পাঁচ দিন পর ধ্বংসস্তূপ থেকে ২৬ বছর বয়সী এক ব্যক্তিকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। তবে দেশটির চলমান গৃহযুদ্ধের কারণে ত্রাণ কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

ভূমিকম্পে কয়েক হাজার ভবন ধসে পড়েছে, সেতু ভেঙে গেছে এবং রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, এ পর্যন্ত ২ হাজার ৮৮৬ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং আহত হয়েছেন ৪ হাজার ৬৩৯ জন।

তবে স্থানীয় সূত্রে মৃতের সংখ্যা আরও অনেক বেশি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

উদ্ধার হওয়া ওই ব্যক্তির নাম নাইং লিন টুন। তিনি রাজধানী শহর নায়েপিদাওয়ের একটি হোটেলে কাজ করতেন। তুরস্ক ও স্থানীয় উদ্ধারকর্মীদের একটি দল নয় ঘণ্টার বেশি সময় ধরে অভিযান চালিয়ে তাকে উদ্ধার করে।

ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে ক্যামেরার মাধ্যমে তার অবস্থান নিশ্চিত করার পর তাকে বের করে আনা হয়।

ভূমিকম্পের পর মানবিক সংকট আরও তীব্র হয়েছে। জাতিসংঘের তথ্যমতে, এরই মধ্যে প্রায় ৩০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং প্রায় ২ কোটি মানুষের জরুরি সহায়তা প্রয়োজন।

ভূমিকম্পের কারণে এই পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।

এদিকে, ত্রাণ সরবরাহের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। ‘থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স’ নামের একটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী ত্রাণবাহী কনভয়ে হামলার জন্য মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে।

তাদের দাবি, চীনের রেড ক্রস সোসাইটির ত্রাণ বহর ম্যান্ডালে যাচ্ছিল এবং সেনাবাহিনীর কাছে তাদের রুটের বিষয়ে তথ্য দেওয়া হয়েছিল। তবে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ত্রাণ বহরটি তাদের রুট সম্পর্কে আগে থেকে কর্তৃপক্ষকে জানায়নি।

ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার জন্য বিভিন্ন দেশ এগিয়ে এসেছে। অস্ট্রেলিয়া এরই মধ্যে প্রায় ৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে।

ভারত ত্রাণ ও উদ্ধারকর্মীসহ নৌবাহিনীর দুটি জাহাজ পাঠিয়েছে। চীন, রাশিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকেও উদ্ধারকারী দল এসেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকেও জরুরি সহায়তার অংশ হিসেবে ২০ লাখ মার্কিন ডলার প্রদানের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয় এবং রাজধানী নায়েপিদাওয়ের কাছাকাছি এলাকা।

তবে দুর্গম এলাকাগুলোতে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত চিত্র এখনো পাওয়া যায়নি। মান্দালয়ের উত্তরে প্রায় ৬৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত একটি স্বর্ণখনিতে ধসের ঘটনায় ২৭ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।

এছাড়া ইনলে লেকের কাছাকাছি ভূমিকম্পের কারণে কাঠের তৈরি বাড়িতে বসবাসকারী অনেক মানুষ মারা গেছেন।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ দূত টম অ্যান্ড্রুজ এক্সে (সাবেক টুইটার) দেওয়া এক বার্তায় বলেছেন, ‘জীবন বাঁচানোর দিকে মনোযোগ দিতে হবে, জীবন নেওয়ার দিকে নয়।’

বর্তমানে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য জরুরি ভিত্তিতে ত্রাণ সরবরাহ করা এবং উদ্ধার কার্যক্রম চালানো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *