ভূমিকম্পে কাঁপল মিয়ানমার! নিহত ও আহত, কেমন আছে থাইল্যান্ড?

ভয়াবহ ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল মায়ানমার, কম্পন অনুভূত বাংলাদেশেও

গত শুক্রবার মধ্য মায়ানমারে ৭.৭ এবং ৬.৪ ম্যাগনিটিউডের দুটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে।

এর ফলে মায়ানমার এবং প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ডে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ভূমিকম্পের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে, প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশসহ আরও কয়েকটি অঞ্চলে এর কম্পন অনুভূত হয়েছে।

ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল সাগাইং শহর থেকে ১৬ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে, ভূপৃষ্ঠ থেকে ১০ কিলোমিটার গভীরে। এর প্রভাবে মায়ানমারের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

দেশটির কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এতটাই বেশি যে, ৬টি প্রদেশে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। এরই মধ্যে বিভিন্ন স্থানে বহু হতাহতের খবর পাওয়া গেছে।

মায়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয় ভূমিকম্পের কেন্দ্র থেকে খুব কাছেই অবস্থিত। এই শহরে প্রায় ১৫ লক্ষ মানুষের বসবাস। ভূমিকম্পের সময় দেশটির রাজধানী নেপিদোতে থাকা আল জাজিরার প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ভবনগুলো একদিকে হেলে যাচ্ছিল এবং দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়ছিল।

ভূমিকম্পের কম্পন প্রায় ৩০ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। এর আগে তিনি এই অঞ্চলে ভূমিকম্প অনুভব করলেও, এত শক্তিশালী কম্পন আগে কখনও দেখেননি।

ভূমিকম্পের কারণে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককের অনেক ভবনও কেঁপে ওঠে। একটি বহুতল ভবনের সুইমিং পুল থেকে পানি রাস্তায় এসে পড়ে এবং নির্মাণাধীন একটি ৩০ তলা ভবন ধসে পরে।

এতে অন্তত ৪৩ জন শ্রমিক আটকা পড়েছে বলে জানা গেছে। থাইল্যান্ডের শেয়ার বাজারও কিছু সময়ের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়।

ব্যাংককে জনসাধারণের জন্য গণপরিবহন ব্যবস্থা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। চীনের সরকারি সংবাদ সংস্থা শিনহুয়া জানিয়েছে, ভূমিকম্পের কম্পন দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিমের ইউনান প্রদেশেও অনুভূত হয়েছে।

তবে সেখানে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। এছাড়া, কম্বোডিয়া, ভারত এবং বাংলাদেশেও ভূমিকম্পের মৃদু কম্পন অনুভূত হয়েছে।

মায়ানমারের তাউংগু শহরে একটি মসজিদে দেয়াল ধসে ২ জন নিহত হয়েছে। এছাড়া, আউংবান শহরে একটি হোটেল ধসে পড়ায় কমপক্ষে ২ জন নিহত এবং ২০ জন আহত হয়েছে।

নেপিদোর ১০০০ শয্যার একটি হাসপাতালে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তাদের হাসপাতালে আসা রোগীদের মধ্যে প্রায় ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে আরও অনেকে।

থাইল্যান্ডের ব্যাংককের গভর্নর জানিয়েছেন, ভূমিকম্পে থাইল্যান্ডে ৩ জন নিহত হয়েছে। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত প্রায় ৯০ জন নিখোঁজ রয়েছে।

ভূমিকম্পের কারণে মায়ানমার ও থাইল্যান্ডে অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। মায়ানমারের সরকারি সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে, ৫টি শহর ও নগরের ভবনগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

নেপিদোর জাতীয় জাদুঘরের ছাদের কিছু অংশও ভূমিকম্পের সময় ভেঙে পড়েছে। এছাড়া, ইয়াঙ্গুন-মান্দালয় এক্সপ্রেসওয়ের একটি রেল সেতু এবং একটি সড়ক সেতু ভেঙে গেছে।

মান্দালয় ও সাগাইংয়ের মধ্যে বয়ে যাওয়া ইরাবতী নদীর ওপরের পুরাতন সাগাইং সেতুও আংশিকভাবে ভেঙে পড়েছে।

মায়ানমারের সামরিক সরকার মান্দালয় ও নেপিদোরসহ বেশ কয়েকটি স্থানে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে। নেপিদোর প্রধান হাসপাতালটিকে “গণ হতাহতের এলাকা” হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

আহতদের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

ভূমিকম্পের পর মানবিক সহায়তার জন্য এগিয়ে এসেছে প্রতিরোধ বাহিনী পিপলস ডিফেন্স ফোর্স। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে মানবিক ও কারিগরি সহায়তা চেয়েছেন দেশটির ছায়া সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

বর্তমানে উদ্ধার অভিযান চলছে। তবে, ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যুতের লাইনের কারণে উদ্ধারকর্মীদের মান্দালয় ও সাগাইং পৌঁছাতে সমস্যা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

রেড ক্রস জানিয়েছে, ভূমিকম্পের কারণে “গুরুতর ক্ষতি” হয়েছে এবং মানবিক চাহিদা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।

ব্যাংককের গভর্নর জানিয়েছেন, আফটারশক বা ভূমিকম্প পরবর্তী কম্পনের সম্ভবনা রয়েছে, তবে আতঙ্কিত না হয়ে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

উল্লেখ্য, মায়ানমার “সাগাইং ফল্ট”-এর ওপর অবস্থিত। এটি ভারতীয় প্লেট এবং বার্মা মাইক্রো-প্লেটের মধ্যে একটি টেকটনিক প্লেট বাউন্ডারি, যার কারণে দেশটি ভূমিকম্পপ্রবণ।

দেশটির দ্রুত নগরায়ন হলেও ভূমিকম্প প্রতিরোধের বিষয়টি এখনও সেভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।

২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে মায়ানমার একটি গৃহযুদ্ধের মধ্যে রয়েছে এবং আন্তর্জাতিকভাবেও অনেকটা বিচ্ছিন্ন। ফলে উদ্ধারকাজ আরও কঠিন হয়ে পড়েছে।

তবে ভারত, ফ্রান্স এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন সাহায্যের প্রস্তাব দিয়েছে।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *