মায়ানমারের সামরিক জান্তার প্রধানের থাইল্যান্ড সফর, ব্যাংকক শীর্ষ সম্মেলনে যোগদান।
মায়ানমারের সামরিক সরকারের প্রধান মিন অং হ্লাইং সম্প্রতি থাইল্যান্ডে একটি আঞ্চলিক সম্মেলনে যোগ দিতে ব্যাংকক সফর করেছেন। ফেব্রুয়ারি ২০২১ সালে অং সান সু চি’র নির্বাচিত সরকার উৎখাত করার পর থেকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তার এই সফরটি খুবই বিরল ঘটনা। গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চি’কে ক্ষমতাচ্যুত করার পর পশ্চিমা বিশ্ব তাকে একঘরে করে রেখেছে।
এমনকি, সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে তিনি আঞ্চলিক সংস্থা, দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় জাতিগুলোর জোট (আসিয়ান)-এর সভাতেও যোগ দিতে পারেননি।
তবে, বঙ্গোপসাগর অঞ্চলের দেশগুলোর একটি তিন দিনের শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে তিনি ব্যাংকক গিয়েছেন। বৃহস্পতিবার বিমানবন্দরে থাইল্যান্ডের শ্রমমন্ত্রী ফিফাত রাতচাকিতপ্রাকারন তাকে স্বাগত জানান।
এরপর তিনি বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড এবং মায়ানমারকে নিয়ে গঠিত বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি-সেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন (বিমসটেক)-এর শীর্ষ নেতাদের সম্মানে আয়োজিত এক নৈশভোজে অংশ নেন।
এছাড়াও, মায়ানমারের এই নেতা বৃহস্পতিবার নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলির সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছেন। শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে তিনি থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী প্যাতোংতার্ন শিনাওয়াত্রা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গেও দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মিলিত হন।
মোদীর এক্সে (সাবেক টুইটার) দেওয়া পোস্টে জানিয়েছেন, তাদের আলোচনায় সংযোগ, সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং অবকাঠামো উন্নয়ন নিয়ে সহযোগিতা গুরুত্ব পেয়েছে। থাই কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে দুর্যোগ প্রতিরোধ, আন্তঃদেশীয় অপরাধ এবং জালিয়াতি চক্র থেকে উদ্ধার হওয়াদের প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
এই বিমসটেক বৈঠক এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন মায়ানমার গত সপ্তাহের ভয়াবহ ভূমিকম্পের ধ্বংসস্তূপ থেকে এখনো পর্যন্ত পুরোপুরি সেরে উঠতে পারেনি। ৭.৭ মাত্রার ভূমিকম্পে হাজার হাজার ঘরবাড়ি ধসে পড়েছে, সেতু ভেঙে গেছে এবং রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সেনাবাহিনীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩,০৮৫ জনে, আহত হয়েছেন ৪,৭০০ জনের বেশি এবং এখনো ৩০০ জনের বেশি নিখোঁজ রয়েছেন।
ভূমিকম্পের এই শোকের মধ্যেই মায়ানমারের সামরিক বাহিনী বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে বিমান হামলা চালিয়েছে, যা আন্তর্জাতিক মহলে নিন্দার জন্ম দিয়েছে। যদিও সামরিক বাহিনী সশস্ত্র প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে বুধবার থেকে ২২ এপ্রিল পর্যন্ত এক অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির ঘোষণা করেছে, কিন্তু উভয় পক্ষই আত্মরক্ষার অধিকারের কথা বলছে এবং বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের খবরও পাওয়া যাচ্ছে।
এদিকে, ব্যাংককে বিক্ষোভকারীরা মায়ানমারের সামরিক প্রধানকে “খুনি” আখ্যা দিয়ে একটি ব্যানার প্রদর্শন করেছে। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত ছায়া সরকার, ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট (এনইউজি), মিন অং হ্লাইং-এর সম্মেলনে অংশগ্রহণের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।
তাদের মতে, মায়ানমারের প্রতিনিধিত্ব করার কোনো বৈধতা তার নেই। এনইউজি বিমসটেককে অবিলম্বে সামরিক জান্তার এই সম্মেলনে অংশগ্রহণ বাতিল করার আহ্বান জানিয়েছে।
“জাস্টিস ফর মায়ানমার” নামের একটি সংগঠন এক বিবৃতিতে বলেছে, মিন অং হ্লাইংকে সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো “মায়ানমারের জনগণের দ্বারা চার বছরের বেশি সময় ধরে প্রতিরোধের শিকার একটি সামরিক জান্তাকে বৈধতা দেয় এবং উৎসাহিত করে। এটি একটি আঞ্চলিক সংস্থা হিসেবে বিমসটেকের সুনামকেও কলঙ্কিত করে।”
মিন অং হ্লাইং-এর ওপর বিভিন্ন আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা রয়েছে এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)-এর প্রধান কৌঁসুলি রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেছেন।
থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নিকরন্দেজ বালানকুরা এক সংবাদ সংস্থাকে বলেন, “আমরা যদি সনদের নিয়ম না মানি, তাহলে বিপদ হবে। সনদে বলা হয়েছে, থাইল্যান্ডের বিমসটেক নেতাদের আমন্ত্রণ জানানোর দায়িত্ব রয়েছে।”
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা।