আতঙ্কে মানুষ! ভূমিকম্পে লণ্ডভণ্ড মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড

ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত মায়ানমার ও থাইল্যান্ড, বাড়ছে মৃতের সংখ্যা।

শুক্রবার মায়ানমার এবং প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ডে ৭.৭ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। এর কিছুক্ষণ পরেই ৬.৪ মাত্রার একটি আফটার শক অনুভূত হয়।

ভূমিকম্পের কারণে উভয় দেশেই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, যার মধ্যে বহু ভবন, একটি সেতু এবং একটি বাঁধও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

মায়ানমারের সামরিক সরকারের প্রধানের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত ১৪৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন ৭০০ জনের বেশি।

মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে একটি নির্মাণাধীন বহুতল ভবন ধসে পড়ায় অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছে।

এছাড়া, চীনের কিছু অংশেও ভূমিকম্পের প্রভাব পড়েছে।

শুক্রবার দুপুরের দিকে ভূমিকম্পটি আঘাত হানে, যার ফলে আতঙ্কে মানুষজন ঘরবাড়ি ছেড়ে খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নেয়।

মায়ানমারের সামরিক সরকার ইতোমধ্যে ছয়টি অঞ্চলে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে।

জাতিসংঘের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে ত্রাণ ও উদ্ধার কার্যক্রমের জন্য জরুরি তহবিল থেকে প্রাথমিকভাবে ৫০ লক্ষ মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৫৪ কোটি টাকার বেশি) বরাদ্দ করা হয়েছে।

জাতিসংঘের মুখপাত্র জানিয়েছেন, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক কর্মীরা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ, অবকাঠামোর ক্ষতি এবং মানবিক প্রয়োজনের বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করছেন।

আন্তর্জাতিক উদ্ধার কমিটি (International Rescue Committee) এর আঞ্চলিক পরিচালক মোহাম্মদ রিয়াস জানিয়েছেন, ভূমিকম্পের ফলে মিয়ানমারে মানবিক পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে, যেখানে প্রায় ২ কোটি মানুষের সাহায্যের প্রয়োজন।

তাদের মধ্যে ৩৫ লক্ষেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া এবং পরিবহন সমস্যার কারণে ক্ষয়ক্ষতির সম্পূর্ণ চিত্র পেতে কয়েক সপ্তাহ লেগে যেতে পারে।

ভূমিকম্পে মায়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়ে বেশ কয়েকটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার মধ্যে একটি মঠও রয়েছে।

সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা গেছে, বহু তলা বিশিষ্ট মঠটি হঠাৎ করে ধসে পড়ছে।

মান্দালয়ের কাছে একটি বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় নিচু এলাকাগুলোতে পানির স্তর বৃদ্ধি পেয়েছে।

এছাড়া, বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়ায় উদ্ধারকর্মীদের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে পৌঁছাতে সমস্যা হচ্ছে।

মান্দালয়ের কাছে ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল।

ভূমিকম্পে শহরের পুরনো রাজপ্রাসাদ এবং বিভিন্ন ভবনেরও ক্ষতি হয়েছে।

মান্দালয় ও ইয়াঙ্গুন শহরের সংযোগকারী একটি পুরনো সেতু ভেঙে পড়েছে এবং মহাসড়কের কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

রাজধানী নেপিদোতে ধর্মীয় উপাসনালয়গুলোরও ক্ষতি হয়েছে।

মায়ানমারের সামরিক সরকারের মুখপাত্র জানিয়েছেন, ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে, বিশেষ করে মান্দালয়, সাগাইং এবং নেপিদোতে রক্তের সংকট দেখা দিয়েছে।

তিনি রক্তদাতাদের দ্রুত হাসপাতালে যোগাযোগ করার আহ্বান জানিয়েছেন।

এদিকে, থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককের সিলম এলাকার একটি নির্মাণাধীন বহুতল ভবন ধসে পড়েছে।

এতে অনেকে হতাহত হয়েছে এবং বহু মানুষ এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

উদ্ধারকর্মীরা জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত কয়েকজনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে।

ব্যাংককের মেয়র এলাকাটিকে দুর্যোগপূর্ণ এলাকা ঘোষণা করেছেন।

থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, তিনি পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন এবং সম্ভাব্য আফটারshock সম্পর্কে সতর্ক করেছেন।

ভূমিকম্পের কারণে চীনের ইউনান এবং সিচুয়ান প্রদেশেও কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

রুয়েলি শহরে ঘরবাড়ির ক্ষতি হয়েছে এবং কয়েকজন আহত হয়েছে।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *