নাগাসাকির বিভীষিকা: পরমাণু বোমা হামলায় ক্ষতিগ্রস্তের নীরব সাক্ষী আজও।
১৯৪৫ সালের ৯ই আগস্ট, জাপানের নাগাসাকি শহরে নেমে এসেছিল এক ভয়ংকর ধ্বংসযজ্ঞ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক নিক্ষিপ্ত পারমাণবিক বোমা কেড়ে নিয়েছিল হাজারো মানুষের জীবন, আর যারা কোনোমতে বেঁচে ছিলেন, তাঁদের শরীরে গেঁথে গিয়েছিল গভীর ক্ষতচিহ্ন।
সেই ভয়াবহতার স্মৃতি আজও অমলিন, আর এর নীরব সাক্ষী হয়ে আছেন সুমিটেরু তানগুচি। সম্প্রতি, অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) সেই সময়ের কিছু শক্তিশালী ছবি পুনরায় প্রকাশ করেছে, যেখানে তানগুচির শরীরের গভীর ক্ষতগুলো স্পষ্টভাবে দেখা যায়।
১৯৪৫ সালে বোমা হামলার সময় তানগুচির বয়স ছিল মাত্র ১৬ বছর। সেই ভয়ংকর দিনটিতে তিনি সাইকেলযোগে একটি চিঠি বিলি করার কাজে ছিলেন।
বোমাটি বিস্ফোরিত হওয়ার ১.৮ কিলোমিটারের মধ্যে ছিলেন তিনি, আর এর ভয়াবহতা তাকেও ছুঁয়ে যায়। বোমার আঘাতে তাঁর শরীরের চামড়া ঝলসে গিয়েছিল, মারাত্মকভাবে পুড়ে গিয়েছিল পিঠ সহ শরীরের বিভিন্ন অংশ।
এরপর জীবনের দীর্ঘ সময় ধরে তাঁকে সেই ক্ষতগুলোর সঙ্গে যুদ্ধ করতে হয়েছে। ছবিগুলো যেন সেই বিভীষিকাময় দিনের এক জীবন্ত প্রতিচ্ছবি।
এপি-র প্রকাশিত ছবিগুলো তুলেছিলেন ইউজিন হশিকো, যিনি টোকিওতে এপি-র প্রধান চিত্রগ্রাহক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
২০১৫ সালে তোলা ছবিগুলোতে তানগুচির ক্ষতগুলো স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান। ছবিগুলো শুধু শারীরিক আঘাতের চিহ্ন বহন করে না, বরং পারমাণবিক যুদ্ধের ভয়াবহতা সম্পর্কে এক নীরব সতর্কবার্তা দেয়।
তানগুচি বিশ্বাস করতেন, এই ছবিগুলো সবার সামনে তুলে ধরা উচিত, যাতে কেউ পারমাণবিক যুদ্ধের ধ্বংসলীলার কথা অস্বীকার করতে না পারে।
জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তানগুচি পারমাণবিক অস্ত্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। তিনি জাপানের ‘নিহন হিদানকিও’ নামক একটি সংগঠনের কো-চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করেছেন, যেটি হিরোশিমা ও নাগাসাকির পারমাণবিক বোমা হামলায় ক্ষতিগ্রস্তদের একটি সংগঠন।
এই সংগঠনের মাধ্যমে তিনি পারমাণবিক অস্ত্রের সম্পূর্ণ বিলোপের জন্য দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করেছেন। তাঁর কণ্ঠস্বর ছিল শান্ত, কিন্তু দৃঢ়। তাঁর শরীরজুড়ে থাকা ক্ষতচিহ্নগুলো ছিল তাঁর সংগ্রামের প্রতীক।
২০১৪ সালে যখন ‘নিহন হিদানকিও’ নোবেল শান্তি পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছিল, তখন তানগুচি’র এই আত্মত্যাগ বিশেষভাবে স্মরণ করা হয়।
সুমিটেরু তানগুচি ২০১৭ সালে মারা যান, কিন্তু তাঁর আদর্শ আজও বেঁচে আছে। তিনি চেয়েছিলেন, এই ধ্বংসযজ্ঞের পুনরাবৃত্তি যেন আর কখনো না হয়।
তাঁর সেই আকাঙ্ক্ষা, তাঁর সংগ্রাম, আর তাঁর শরীরের ক্ষতচিহ্নগুলো—এ সবই পারমাণবিক অস্ত্রের বিরুদ্ধে এক শক্তিশালী বার্তা বহন করে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস