নাক ডাকার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ? যা করলে মুক্তি মিলবে!

ঘুমের মধ্যে নাক ডাকা একটি সাধারণ সমস্যা, যা অনেকেরই অজানা স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ হতে পারে। নাক ডাকা আসলে কী, এর কারণগুলো কী এবং কিভাবে এর প্রতিকার করা যেতে পারে, সেই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

নাক ডাকার মূল কারণ হলো ঘুমের সময় শ্বাসনালীর কিছু অংশের শিথিল হয়ে যাওয়া। যখন আমরা ঘুমাই, তখন আমাদের শরীরের পেশিগুলো, বিশেষ করে মুখ ও গলার আশেপাশে, বিশ্রাম নেয়।

এর ফলে শ্বাসনালী সংকুচিত হয়ে যায়। শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় বাতাস যখন এই সরু পথে প্রবেশ করে, তখন সেখানকার নরম টিস্যুগুলো কাঁপতে থাকে, আর এই কম্পনের ফলেই নাক ডাকার শব্দ তৈরি হয়।

নাক ডাকা তেমন গুরুতর সমস্যা না হলেও, এটি শরীরের জন্য বেশ কিছু স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। হালকা নাক ডাকা হয়তো তেমন উদ্বেগের কারণ নয়, তবে এটি যদি মারাত্মক আকার ধারণ করে, তবে তা ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায় এবং শরীরের উপর খারাপ প্রভাব ফেলে।

অনেক সময় এটি স্লিপ অ্যাপনিয়ার মতো গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। স্লিপ অ্যাপনিয়া হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে ঘুমের সময় শ্বাস-প্রশ্বাস কিছু সময়ের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, এমনকি স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া এবং স্ট্রোকের ঝুঁকিও বাড়তে পারে।

নাক ডাকার সমস্যা সমাধানে কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। জীবনযাত্রার পরিবর্তন এর মধ্যে অন্যতম। অতিরিক্ত ওজন কমানো, নিয়মিত ব্যায়াম করা, ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার করা, ঘুমের ভঙ্গি পরিবর্তন করা – ইত্যাদি নাক ডাকা কমাতে সহায়ক হতে পারে।

অনেক সময় চিৎ হয়ে ঘুমানোর পরিবর্তে কাত হয়ে ঘুমালে শ্বাস-প্রশ্বাস সহজ হয়, ফলে নাক ডাকা কমে। বাজারে বিভিন্ন ধরনের বালিশ পাওয়া যায়, যা ঘুমের ভঙ্গি পরিবর্তনে সাহায্য করতে পারে।

চিকিৎসা বিজ্ঞানে নাক ডাকার চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। স্লিপ অ্যাপনিয়ার মতো গুরুতর সমস্যা নির্ণয়ের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। অনেক ক্ষেত্রে, চিকিৎসকেরা ঘুমের পরীক্ষা (স্লিপ স্টাডি) করার পরামর্শ দেন।

এই পরীক্ষার মাধ্যমে ঘুমের সময় শ্বাস-প্রশ্বাস এবং অন্যান্য শারীরিক কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করা হয়। সমস্যার তীব্রতা অনুযায়ী, ডাক্তাররা সিপিএপি (CPAP) মেশিন ব্যবহারের পরামর্শ দিতে পারেন, যা ঘুমের সময় শ্বাসনালীকে খোলা রাখতে সাহায্য করে।

এছাড়া, ওরাল অ্যাপ্লায়েন্স (oral appliance) নামক এক ধরনের যন্ত্র ব্যবহার করা যেতে পারে, যা ঘুমের সময় চোয়ালকে সঠিক অবস্থানে রেখে শ্বাসনালীকে খোলা রাখতে সাহায্য করে।

নাক ডাকার সমস্যা সমাধানে ঘরোয়া কিছু উপায়ও চেষ্টা করা যেতে পারে। যেমন, ঘুমের আগে অ্যালকোহল পান করা থেকে বিরত থাকা, ঘুমের সময় মাথার সঠিক অবস্থান বজায় রাখা, এবং নাকের প্যাঁচ ব্যবহার করা।

বাজারে কিছু বিশেষ ধরনের বালিশ পাওয়া যায়, যা ঘুমের সময় সঠিক অবস্থানে থাকতে সাহায্য করে। এছাড়া, ঘুমের সময় শব্দ কমানোর জন্য কানের প্লাগ বা সাদা শব্দ তৈরি করার যন্ত্র ব্যবহার করা যেতে পারে।

নাক ডাকা যদি আপনার জীবনযাত্রায় সমস্যা তৈরি করে, তবে অবশ্যই একজন ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করুন। কারণ, সঠিক রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসার মাধ্যমে আপনি সুস্থ জীবন যাপন করতে পারেন।

নাক ডাকা এবং ঘুমের অন্যান্য সমস্যা সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে এবং প্রতিকারের জন্য একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া সবচেয়ে ভালো।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *