ফিলিস্তিনে ধ্বংসযজ্ঞ: নাকাবার বিভীষিকা আজও, আসছে নতুন শব্দ?

ফিলিস্তিনের বিপর্যয়ের নতুন সংজ্ঞা: ‘আল-ইবাদাহ’।

১৯৪৮ সালের মে মাসে, ফিলিস্তিনের খাদিজা আম্মার, তাঁর জন্মভূমি, বেইত দারাস থেকে শেষবারের মতো যখন বেরিয়ে এসেছিলেন, তখন তাঁর সঙ্গে ছিলেন আরও হাজারো ফিলিস্তিনি। তাঁদের সবারই একটাই পরিচয় ছিল – উদ্বাস্তু।

নিজেদের প্রিয় ঘরবাড়ি, ভিটেমাটি ছেড়ে তাঁরা সবাই যেন এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে পা বাড়াচ্ছিলেন। সেই সময় তাঁদের এই ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কোনো শব্দ ছিল না।

কালের পরিক্রমায়, তাঁরা তাঁদের এই কষ্টদায়ক পরিস্থিতির নাম দেন ‘নাকবা’, যার অর্থ ‘বিপর্যয়’।

কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে, ফিলিস্তিনিদের ওপর নেমে আসা এই বিপর্যয় যেন থামতেই চাইছে না। বরং, এটি নতুন রূপে ফিরে আসছে।

তাই, এখন প্রয়োজন এই পরিস্থিতির নতুন সংজ্ঞা দেওয়া। কারণ, বর্তমান পরিস্থিতিকে শুধু ‘নাকবা’ বললে, তা যথেষ্ট হয় না।

সম্প্রতি, আল-জাজিরায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে, লেখক ফিলিস্তিনিদের বর্তমান পরিস্থিতিকে সংজ্ঞায়িত করতে ‘আল-ইবাদাহ’ শব্দটি ব্যবহারের প্রস্তাব করেছেন। এই ‘আল-ইবাদাহ’-এর অর্থ হলো ‘ধ্বংস’ বা ‘বিনাশ’।

লেখক মনে করেন, ‘নাকবা’ শব্দটি দিয়ে অতীতের সেই ভয়াবহ ঘটনাকে বোঝানো গেলেও, বর্তমান সময়ের ভয়াবহতাকে সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ করার জন্য এই শব্দটি যথেষ্ট নয়।

বর্তমানে গাজায় যা ঘটছে, তা হলো ধ্বংসযজ্ঞ। সেখানকার শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে, যা ‘স্কলাস্টিকাইড’-এর শামিল।

গাজাকে সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিহ্ন করার যে প্রক্রিয়া চলছে, তাকে ‘গাজাসাইড’ হিসেবেও উল্লেখ করা যায়। এই বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে, লেখক বর্তমান পরিস্থিতিকে সংজ্ঞায়িত করতে ‘আল-ইবাদাহ’ শব্দটির অবতারণা করেছেন।

ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোটরিচ-এর একটি বক্তব্য তুলে ধরে লেখক বলেন, গাজা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দেওয়া হবে এবং সেখানকার বেসামরিক নাগরিকদের অন্য দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। এই ধরনের ধ্বংসাত্মক মনোভাব ‘আল-ইবাদাহ’ শব্দটির মাধ্যমে আরও ভালোভাবে ফুটে ওঠে।

‘আল-ইবাদাহ’ শব্দটি কেবল গাজার পরিস্থিতি নয়, বরং পুরো ফিলিস্তিনের মানুষের ওপর চালানো অত্যাচারের ব্যাপকতাকে তুলে ধরে।

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহতদের পরিবারের সদস্যদের দুঃখ-কষ্টের বর্ণনা দিতে গিয়ে লেখক তাঁর পরিবারের সদস্যদের কথাও উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, তাঁর পরিবারের অনেকে এই হামলায় নিহত হয়েছেন।

তাঁর এক আত্মীয়, যিনি জাতিসংঘের ত্রাণকর্মী ছিলেন, তিনিও বোমা হামলায় নিহত হন। এছাড়া, সাংবাদিক, চিকিৎসক, বুদ্ধিজীবী এবং সাধারণ নাগরিক—সবাই ইসরায়েলি হামলার শিকার হচ্ছেন।

গাজার একটি রেস্টুরেন্টে বোমা হামলায় নিহত হন সাংবাদিক ইয়াহইয়া সুবেইহ। ঘটনার দিন সকালেই তাঁর কন্যাসন্তানের জন্ম হয়েছিল। মেয়ের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে গিয়ে তিনি নিহত হন।

এই ঘটনাগুলো ধ্বংসের এক চরম দৃষ্টান্ত।

বিশ্ব সম্প্রদায়ের নীরবতার মধ্যে, ফিলিস্তিনিরা তাঁদের কথা বলার অধিকারটুকু এখনো ধরে রেখেছেন।

তাই, এই কঠিন সময়ে, ‘আল-ইবাদাহ’ শব্দটির মাধ্যমে, তাঁরা তাঁদের ওপর হওয়া ধ্বংসযজ্ঞের কথা বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরতে চান।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *