নমস্কার পাঠকবৃন্দ! হলিউডের সোনালী যুগে এশীয় অভিনেত্রীদের লড়াইয়ের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত নিয়ে আজ আমরা কথা বলব। সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে ন্যান্সি কুয়ানের আত্মজীবনী, “দ্য ওয়ার্ল্ড অফ ন্যান্সি কুয়ান”। এই বইয়ে তিনি তুলে ধরেছেন তাঁর অভিনয় জীবনের নানা দিক, বিশেষ করে হলিউডে একজন এশীয় নারী হিসেবে প্রতিকূলতা ও সাফল্যের গল্প।
ন্যান্সি কুয়ান ১৯৩৯ সালে হংকংয়ে জন্মগ্রহন করেন। তাঁর বাবা ছিলেন চীনা এবং মা ছিলেন ব্রিটিশ। সেই সময়ে ইউরেশীয় হিসেবে পরিচিত হওয়াটা ছিল বেশ কঠিন। নিজের আত্মজীবনীতে কুয়ান সেই সময়ের কথা বলতে গিয়ে জানান, কীভাবে তিনি জাতিগত বৈষম্যের শিকার হয়েছিলেন। তবে তিনি ছিলেন হার না মানা এক লড়াকু নারী।
কুয়ানের অভিনয় জীবন শুরু হয় “দ্য ওয়ার্ল্ড অফ সুজি ওং” (The World of Suzie Wong) ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে। এই ছবিতে সুজি ওং চরিত্রে অভিনয় করে তিনি পরিচিতি লাভ করেন। যদিও সেই সময়ে এশীয় নারীদের চরিত্রগুলো ছিল একরকমের গতানুগতিক, তবুও কুয়ানের অভিনয় দর্শক ও সমালোচকদের নজর কাড়ে।
এরপর তিনি “ফ্লাওয়ার ড্রাম সং” (Flower Drum Song) ছবিতেও অভিনয় করেন, যা সেই সময়ের প্রেক্ষাপটে একটি সাহসী পদক্ষেপ ছিল। ছবিতে ধনী ও ফ্যাশনেবল এশীয়দের জীবনযাত্রা ফুটিয়ে তোলা হয়েছিল, যা চিরাচরিত ধারণাকে ভেঙে দেয়।
কুয়ানের আত্মজীবনীতে হলিউডের সোনালী যুগের অনেক নামী মানুষের কথা জানা যায়। তাঁর বন্ধু ছিলেন ব্রুস লি। এছাড়াও ক্যাথরিন হেপবার্ন, ডিক ভ্যান ডাইক-এর মতো তারকার সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের কথা বইটিতে উল্লেখ করেছেন তিনি।
বইটিতে কুয়ান শুধু তাঁর অভিনয় জীবনের কথাই বলেননি, বরং সেই সময়ের বর্ণবাদের চিত্রও তুলে ধরেছেন। সেই সময়, বিশেষ করে হলিউডে, এশীয় অভিনেতাদের চরিত্রগুলো ছিল খুবই সীমিত। হয় তারা ছিলেন “ফু মানচু ভিলেন”, না হয় “হাইপারসেক্সুয়ালাইজড ড্রাগন লেডি” অথবা “কৌতুক অভিনেতা”।
কুয়ান মনে করেন, তাঁর গল্পটা কঠিন পরিশ্রম এবং প্রতিকূলতা সত্ত্বেও এগিয়ে যাওয়ার গল্প।
কুয়ানের এই আত্মজীবনীতে উঠে এসেছে তাঁর বন্ধু, অভিনেত্রী মিয়শি উমেকির কথাও। মিয়শি তাঁর চরিত্রগুলোতে “পিজ়িন” ভাষায় কথা বলতে বাধ্য হতেন, কারণ এটাই ছিল তাঁর কাজ।
ন্যান্সি কুয়ানের ভাষায়, আমেরিকায় এশীয় হওয়া মানে হল “আমাদের সকলের মধ্যেকার মানবতা”। যেখানে প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্যের মিলন ঘটতে পারে, এবং হয়তো কিছুটা হলেও বিশ্বকে আরও সুন্দর করে তোলা সম্ভব।
ন্যান্সি কুয়ানের জীবন থেকে আমরা শিখতে পারি, প্রতিকূলতা সত্ত্বেও কীভাবে নিজের স্বপ্নকে সত্যি করা যায়। তাঁর এই আত্মজীবনী শুধু একজন অভিনেত্রীর আত্মকথা নয়, বরং এটি একটি সংগ্রামের গল্প, যা আমাদের সকলের জন্য অনুপ্রেরণা জোগায়।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস