ন্যাপির ‘ভুল’ কাজ! পরিবারের খাবার কিনে খাওয়ায় চরম বিপাকে, ভাইরাল ঘটনা

শিরোনাম: খাবারের অধিকার নিয়ে বিতর্কে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এক বিদেশি গৃহকর্মী, দেশে ফেরার কথা ভাবছেন

যুক্তরাষ্ট্রে এক বিদেশি তরুণীর নিজের খাবার কেনা এবং তা বাচ্চাদের সাথে ভাগাভাগি না করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া বিতর্ক এখন আলোচনার বিষয়। ওই তরুণী সেখানে একজন ‘অ’ পেয়ার’ হিসেবে কাজ করেন। মূলত শিশুদের দেখাশোনা করাই তাঁর কাজ।

সম্প্রতি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাঁর অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন তিনি।

জানা গেছে, ওই তরুণী ফেব্রুয়ারি মাস থেকে একটি পরিবারের সাথে কাজ শুরু করেন। তাঁর কাজের শর্ত ছিল, পরিবার তাকে প্রতি সপ্তাহে ১৯,০০০ টাকার (ধরুন, সেই সময়ের বিনিময় হার অনুযায়ী) মতো দেবেন, থাকার জায়গা এবং খাবার দেবেন, এবং পড়াশোনার খরচ বাবদ প্রায় ৫২,০০০ টাকা পর্যন্ত দেবেন।

ওই তরুণীর ভাষ্যমতে, শিশুদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক বেশ ভালো। তিনি তাদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছেন। তবে অভিভাবকদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক তেমন ভালো নয়।

অভিভাবকদের নিয়ম অনুযায়ী, ওই তরুণী বাড়ির একটি নির্দিষ্ট আলমারি থেকে খাবার নিতে পারতেন, যা মাসে একবার পূরণ করা হতো। এমনকি, কর্তৃপক্ষের হুঁশিয়ারি ছিল, তিনি যদি অন্য কোনো খাবার নেওয়ার চেষ্টা করেন, তাহলে ক্যামেরার মাধ্যমে তা ধরা পড়বে।

পরিবারটি স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার ব্যাপারে বেশ সচেতন, তাই ওই আলমারিতে সাধারণত টর্টিলা, টিনের সবজি, শিম এবং পাস্তার মতো খাবার থাকত। মাংস, পনির, স্ন্যাকস বা পানীয়—এসব কিছুই তাকে দেওয়া হতো না।

এই পরিস্থিতিতে তিনি তাঁর এজেন্সিকে জানান এবং জানতে চান, অভিভাবকদের এমন আচরণ কতটা যুক্তিসঙ্গত। এজেন্সি জানায়, পরিবার খাবার সরবরাহ করলে তাদের এমনটা করার অধিকার আছে।

সেক্ষেত্রে হয় তাকে অন্য কোনো পরিবার খুঁজতে হবে, অথবা দেশে ফিরে যেতে হবে।

তরুণীটি শেষ পর্যন্ত সেখানেই কাজ চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। নিজের জন্য খাবার কেনার উদ্দেশ্যে তিনি তাঁর বেতনের কিছু অংশ জমাতে শুরু করেন।

তাঁর ভাষায়, খাবারের বিষয়টি তাঁর জন্য বেশ উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তাই তিনি চিপস, কুকিজ এবং শুকনো মাংসের মতো কিছু হালকা খাবার কেনা শুরু করেন, যা সাধারণত ওই পরিবারের শিশুরা খায় না।

ওই তরুণীর কথায়, “আমি ইচ্ছাকৃতভাবে শিশুদের সামনে খাবার খেতে চাইনি। কিন্তু আমি তাদের সঙ্গেই দিনের বেশিরভাগ সময় কাটাই, তাই আমার খিদে পেলে তাদের সামনেই খেতে হতো।”

এর পরেই শিশুদের মধ্যে তাঁর খাবার ভাগ করে নেওয়ার আবদার বাড়তে থাকে। তিনি তাদের অভিভাবকদের কাছে চাইতে বলেন।

তরুণীর বক্তব্য অনুযায়ী, তাঁর সীমিত আয়ে সবার জন্য যথেষ্ট খাবার কেনা সম্ভব ছিল না। আর তাঁর বাবা-মায়ের পক্ষেও তাঁকে সাহায্য করা সম্ভব ছিল না।

তিনি আরও জানান, খাবারগুলো ধীরে ধীরে খেলে কয়েক দিন চলত।

কিন্তু এর পরেই অভিভাবকদের, বিশেষ করে ওই বাড়ির মা-এর সঙ্গে তাঁর মনোমালিন্য শুরু হয়।

ওই তরুণীর কথায়, “মা রেগে গিয়ে (শিশুদের সামনে) আমাকে বলেন, শিশুদের খাবার দিতে অস্বীকার করার মতো এত সাহস আমার কীভাবে হয়।”

মা আরও বলেন, শিশুদের সামনে খাবার খেলে তাকে ভাগ করে নিতে হবে, কারণ তাদের বাড়িতে জাঙ্ক ফুডের কোনো স্থান নেই। ওই তরুণী জানান, পাল্টা কিছু বললে হয়তো তাঁকে কাজ থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হতে পারে, এমন একটা ভয় ছিল।

তবে তিনি জানান, তাঁর নিজের এবং শিশুদের জন্য যথেষ্ট খাবার কেনার মতো সামর্থ্য তাঁর নেই। উত্তরে মা জানান, তিনি ‘একজন নানীকে সত্যিই প্রয়োজন’ তাই তিনি ভাগ্যবান।

বিষয়টি পরিবার ও বন্ধুদের জানানোর পর, তাঁরা তরুণীকে ভুল বলেছিলেন। এতে তিনি বেশ হতাশ হয়ে পড়েন এবং সামাজিক মাধ্যমে তাঁর মতামত জানতে চান।

অনেকেই তাঁকে অন্য পরিবার খুঁজে নিতে বলেন। কেউ কেউ মনে করেন, তাঁর এজেন্সি তাঁর সুযোগ নিচ্ছে।

বর্তমানে, তিনি যুক্তরাষ্ট্রে থাকলেও, সবার মন্তব্যের পর দেশে ফিরে যাওয়ার কথা ভাবছেন।

তথ্য সূত্র: পিপলস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *