নভেম্বর মাস, লেখকদের জন্য একটি বিশেষ মাস ছিল। সারা বিশ্ব থেকে লেখকেরা একত্রিত হয়ে একটি চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতেন – এক মাসে একটি উপন্যাস লেখার চ্যালেঞ্জ।
এই চ্যালেঞ্জের নাম ছিল ‘ন্যাশনাল নভেল রাইটিং মন্থ’ বা সংক্ষেপে ‘নানোরাইমো’ (NaNoWriMo)। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, দুই দশকের বেশি সময় ধরে লেখকদের উৎসাহ যোগানো এই প্ল্যাটফর্মটি এবার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
নানোরাইমোর মূল ধারণা ছিল, নভেম্বরের এক মাসে একজন লেখককে ৫০,০০০ শব্দ লিখতে হবে। শুনতে কঠিন লাগলেও, লেখকদের মধ্যে এটি দারুণ সাড়া ফেলেছিল।
হাজার হাজার লেখক এই চ্যালেঞ্জে অংশ নিতেন, নিজেদের লেখার দক্ষতা প্রমাণ করতে চাইতেন। এমন অনেক লেখক আছেন, যারা নানোরাইমোর মাধ্যমে লেখালেখি শুরু করেছেন এবং পরবর্তীতে সফল হয়েছেন।
তবে, নানোরাইমোর যাত্রা সবসময় মসৃণ ছিল না। আর্থিক সমস্যা এবং কিছু বিতর্ক এর পথকে কঠিন করে তুলেছিল। উদাহরণস্বরূপ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) ব্যবহার নিয়ে প্ল্যাটফর্মটির অবস্থান এবং একজন মডারেটরের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ, ইত্যাদি বিষয়গুলো এর দুর্বলতা তৈরি করে।
শেষ পর্যন্ত, এই সমস্যাগুলোই সম্ভবত এর সমাপ্তি ডেকে এনেছে।
একজন লেখক হিসেবে, নানোরাইমোর অভিজ্ঞতা কেমন ছিল? অনেকেই হয়তো ভাবেন, এত অল্প সময়ে এত শব্দ লেখা কঠিন।
কিন্তু লেখকদের মতে, এটি আসলে একটি দারুণ অভিজ্ঞতা ছিল। দ্রুত লেখার অভ্যাস তৈরি হয়, যা অনেক লেখকের জন্য খুব দরকারি।
তবে, দ্রুত লিখতে গিয়ে লেখার মান বজায় রাখা সবসময় সম্ভব হয় না। নানোরাইমোর চ্যালেঞ্জে অংশ নেওয়া একজন লেখকের নিজের অভিজ্ঞতা তেমনটাই ছিল। তিনি বলেন, চ্যালেঞ্জটি তাকে দ্রুত লিখতে শিখিয়েছিল, কিন্তু লেখার মান নিয়ে তিনি খুব একটা সন্তুষ্ট ছিলেন না।
বাংলাদেশেও অনেক লেখক রয়েছেন, যারা লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত। আমাদের দেশেও বিভিন্ন সাহিত্য সংগঠন এবং প্ল্যাটফর্ম রয়েছে, যা লেখকদের উৎসাহিত করে।
লেখকদের জন্য এখানেও বিভিন্ন ধরনের কর্মশালা, প্রতিযোগিতা এবং আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। নানোরাইমোর মতো এমন একটি আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মের বন্ধ হয়ে যাওয়া হয়তো অনেকের জন্য দুঃখের, তবে লেখার স্পৃহা কখনো থেমে থাকে না।
লেখকদের জন্য এখন গুরুত্বপূর্ণ হলো, নিজেদের লেখার ধারা অব্যাহত রাখা এবং নতুন নতুন আইডিয়া নিয়ে আসা। ভালো লেখার জন্য প্রয়োজন অধ্যবসায়, নিয়মিত অনুশীলন এবং অবশ্যই ভালো একটি গল্প।
নানোরাইমোর ধারণা হয়তো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, তবে লেখকদের এই পথচলা কখনোই থেমে থাকবে না। নতুন লেখকদের জন্য আমাদের দেশের সাহিত্য অঙ্গনেও রয়েছে অনেক সুযোগ। তাই, আসুন আমরা সবাই মিলে লেখকদের পাশে দাঁড়াই এবং বাংলা সাহিত্যের উন্নতিতে সহায়তা করি।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান