পৃথিবীতে ফিরছেন নভোচারীরা! বিদায় অস্পষ্ট দৃষ্টি, ফোলা মুখ আর চিকন পা!

মহাকাশ থেকে ফিরছেন নভোচারীরা: শরীরে কি কি পরিবর্তন হয়, কিভাবে স্বাভাবিক জীবনে ফেরেন তারা

প্রায় নয় মাস মহাকাশে কাটানোর পর আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (International Space Station – ISS) থেকে পৃথিবীর বুকে ফিরছেন নভোচারী বারী “বাচ” উইলমোর এবং সুনি উইলিয়ামস। মহাকাশ যাত্রার সময় নভোচারীদের শরীরে নানা ধরনের পরিবর্তন আসে, যা তাদের স্বাস্থ্য এবং স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় প্রভাব ফেলে।

সম্প্রতি, এই নভোচারীদের প্রত্যাবর্তনের প্রাক্কালে তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে এমনটাই জানিয়েছেন মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা NASA-র চিকিৎসকেরা।

মহাকাশে দীর্ঘ সময় কাটানোর ফলে মানুষের শরীরে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা যায়।

মাধ্যাকর্ষণ শক্তির অভাবে নভোচারীদের হাড়ের ঘনত্ব কমতে শুরু করে এবং পেশি দুর্বল হয়ে যায়। এটিকে চিকিৎসা পরিভাষায় ‘অ্যাট্রফি’ বলা হয়।

এর ফলে তাদের হাড় দুর্বল হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে। এমনকী, সামান্য আঘাতেও তাদের হাড় ভাঙতে পারে।

দীর্ঘ সময় ধরে মহাকাশে থাকার কারণে তাদের পেশী আকারে ছোট হয়ে আসে।

মহাকাশে থাকার কারণে শরীরের তরল পদার্থগুলোর পুনর্বণ্টন ঘটে।

পৃথিবীর অভিকর্ষজ টানের অভাবে শরীরের জলীয় উপাদান শরীরের উপরের দিকে, বিশেষ করে মুখমন্ডলের দিকে প্রবাহিত হয়।

ফলে তাদের মুখ ফুলে যায় এবং হাত-পা চিকন হয়ে যায়, যা দেখতে অনেকটা পাখির পায়ের মতো লাগে।

এই কারণে তাদের ‘চিকেন লেগস’ বা ‘পাখির পা’ ও ‘পাফি ফেস’ সিন্ড্রোমের মতো সমস্যা দেখা দেয়।

এছাড়াও, দৃষ্টিশক্তির পরিবর্তনও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

তরলের এই পুনর্বণ্টনের কারণে চোখের আকার পরিবর্তন হয় এবং অনেক সময় ঝাপসা দেখায়।

মহাকাশে মানুষের কঙ্কাল সামান্য লম্বা হতে পারে।

বিজ্ঞানীরা একে ‘স্পেস হাইট’ বলে থাকেন।

মাধ্যাকর্ষণ শক্তি না থাকার কারণে মেরুদণ্ড সোজা হয়ে যায়, ফলে উচ্চতা সামান্য বাড়ে।

তবে পৃথিবীতে ফেরার পর অভিকর্ষজ টানের কারণে তারা আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসে।

নভোচারীদের সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনতে NASA বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করে।

তাদের জন্য বিশেষ খাদ্য তালিকা তৈরি করা হয় এবং তারা প্রতিদিন ব্যায়াম করেন।

এর মধ্যে ট্রেডমিল বা স্থির বাইকের মতো সাধারণ ব্যায়ামের পাশাপাশি একটি বিশেষ ‘অ্যাডভান্সড রেজিস্ট্রিভ এক্সারসাইজ ডিভাইস’-ও ব্যবহার করা হয়, যা পৃথিবীর ওজন তোলার মতো কাজ করে।

NASA-র বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এই ব্যায়ামগুলো নভোচারীদের হাড় ও পেশি মজবুত রাখতে সহায়তা করে।

মহাকাশে থাকাকালীন নভোচারীদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যায়।

শরীরে থাকা কিছু ভাইরাস সক্রিয় হয়ে ওঠে, তবে এর দীর্ঘমেয়াদী কোনো স্বাস্থ্য ঝুঁকি আছে কিনা, তা এখনো নিশ্চিত নয়।

এছাড়া, মহাকাশের বিকিরণ DNA-এর গঠনেও পরিবর্তন আনতে পারে।

নভোচারীরা পৃথিবীতে ফেরার পর তাদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শুরু হয়।

এই সময় তাদের হাড়ের ঘনত্ব বাড়ানো এবং পেশি শক্তিশালী করার জন্য বিভিন্ন ধরনের শারীরিক ব্যায়াম করানো হয়।

এছাড়া, হৃদপিণ্ডের কার্যকারিতা স্বাভাবিক রাখতে কার্ডিওভাসকুলার ব্যায়ামও করানো হয়।

সমন্বয়ক্ষমতা বাড়ানোর জন্যেও কিছু ব্যায়াম করতে হয়, যা তাদের আহত হওয়া থেকে রক্ষা করে।

মহাকাশ থেকে ফিরে আসার পর নভোচারীদের শারীরিক পরিবর্তনের সঙ্গে মানসিকভাবেও খাপ খাইয়ে নিতে হয়।

অনেক সময় তারা এক ধরনের ‘ওভারভিউ ইফেক্ট’-এর শিকার হন।

মহাকাশ থেকে পৃথিবীকে দেখার অভিজ্ঞতা তাদের জীবন সম্পর্কে নতুন ধারণা দেয়।

তারা পৃথিবীর সৌন্দর্য এবং ভঙ্গুরতা অনুভব করেন, যা তাদের মধ্যে অন্যদের প্রতি এক গভীর সংযোগ তৈরি করে।

নভোচারীদের স্বাস্থ্য এবং তাদের পৃথিবীতে ফিরে আসার প্রক্রিয়া নিয়ে গবেষণা ভবিষ্যতে মহাকাশ অভিযানের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

কারণ, মানুষ যখন দীর্ঘ সময়ের জন্য চাঁদ বা মঙ্গলের মতো গ্রহে বসবাস করবে, তখন তাদের সুস্থ জীবনযাত্রা নিশ্চিত করতে এই গবেষণাগুলো সাহায্য করবে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *