মহাকাশ যাত্রা: নয় মাস পর পৃথিবীতে ফিরলেন নভোচারী, প্রযুক্তিগত ত্রুটি নিয়ে মুখ খুললেন তাঁরা
আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (ISS) দীর্ঘ নয় মাস অতিবাহিত করার পর অবশেষে পৃথিবীতে ফিরেছেন দুই মার্কিন নভোচারী। বোয়িং স্টারলাইনার মহাকাশযানের প্রথম ক্রুড মিশনে প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে তাঁদের প্রত্যাবর্তনে দেরি হয়। শুরুতে এই মিশন ১০ দিনের জন্য পরিকল্পনা করা হলেও, বিভিন্ন সমস্যার কারণে তাঁদের প্রায় নয় মাস মহাকাশেই থাকতে হয়।
সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে নভোচারী ব্যারি “বাচ” উইলমোর এবং সুনিটা উইলিয়ামস তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা জানান।
নভোচারীরা জানান, তাঁদের দীর্ঘ সময় ধরে মহাশূন্যে আটকে থাকার যে গুঞ্জন উঠেছিল, তা সঠিক নয়। তাঁরা কখনোই নিজেদের ‘আটকে পড়া’ বা ‘বিচ্ছিন্ন’ মনে করেননি। বরং, তাঁরা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের (ISS) ক্রু-সদস্য হিসেবে স্বাভাবিক দায়িত্ব পালন করেছেন।
উইলমোর বলেন, “আমরা একটি ঘটনার জন্য পরিকল্পনা করেছিলাম, কিন্তু অন্য কিছুর জন্য প্রস্তুত ছিলাম।”
মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার (NASA) এই মিশনে বোয়িং স্টারলাইনার মহাকাশযানের যাত্রা পথে কিছু প্রযুক্তিগত সমস্যা দেখা দেয়। এর মধ্যে হিলিয়াম লিক এবং থ্রাস্টার নিয়ন্ত্রণে সমস্যা ছিল প্রধান।
এই কারণে নভোচারীদের পৃথিবীতে ফিরতে বিলম্ব হয়। তাঁরা জানান, এই অভিজ্ঞতা তাঁদের জন্য শিক্ষণীয় ছিল এবং ভবিষ্যতে মহাকাশ মিশনে আরও ভালো প্রস্তুতি নিতে সহায়তা করবে।
সংবাদ সম্মেলনে নভোচারীরা তাঁদের কাজ এবং মিশনের বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলেন। সুনিতা উইলিয়ামস জানান, মহাকাশে থাকাকালীন তাঁরা তাঁদের কাজের প্রতি মনোযোগী ছিলেন এবং পৃথিবীর বাইরের জগৎ সম্পর্কে তাঁদের তেমন ধারণা ছিল না।
মিশনের কমান্ডার হিসেবে নিক হাগ তাঁদের সঙ্গে ছিলেন এবং তাঁদের নিরাপদে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করেন।
এই ঘটনার পরে, বিভিন্ন মহলে এই মিশন নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে, স্পেসএক্স-এর প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্ক এবং প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে এই বিষয়ে মতবিরোধ দেখা যায়।
তাঁরা নভোচারীদের মহাশূন্যে ‘ফেলে আসা’ হয়েছে বলে মন্তব্য করেন। তবে নভোচারীরা তাঁদের বক্তব্যে এই ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
নভোচারীরা জানিয়েছেন, তাঁরা আবারও স্টারলাইনারে চড়ে মহাকাশে যেতে প্রস্তুত। উইলমোর বলেন, মিশন চলাকালীন কিছু বিষয় ছিল, যা তিনি জানতে চেয়েছিলেন এবং প্রস্তুতিতে কিছু ঘাটতি ছিল।
তিনি ভবিষ্যতে এই ধরনের সমস্যা সমাধানে আরও বেশি মনোযোগ দেওয়ার কথা বলেন। বোয়িং এবং নাসা উভয়ই এই ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে কাজ করছে এবং ভবিষ্যতে মহাকাশ মিশনকে আরও উন্নত করার চেষ্টা করছে।
মহাকাশ গবেষণা এবং প্রযুক্তি মানুষের জীবনকে উন্নত করতে পারে। এই মিশনের অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতে বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
তথ্য সূত্র: