নাসার নভোচারীদের দীর্ঘ মহাকাশ অভিযান: অপ্রত্যাশিত প্রত্যাবর্তন এবং ভবিষ্যতের দিগন্ত।
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (International Space Station – ISS) থেকে পৃথিবীতে ফিরে এসেছেন নাসার দুই নভোচারী, সুনি উইলিয়ামস এবং বুচ উইলমোর। তাঁদের প্রত্যাবর্তনের এই ঘটনা শুধু একটি মহাকাশ অভিযানের সমাপ্তিই নয়, বরং জটিলতা এবং সাফল্যের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
গত জুনে বোয়িং স্টারলাইনার (Boeing Starliner) মহাকাশযানে করে তাঁরা আট দিনের জন্য যাত্রা শুরু করেছিলেন। কিন্তু অপ্রত্যাশিতভাবে, মহাকাশযানের বিভিন্ন কারিগরি ত্রুটির কারণে তাঁদের এই সফর দীর্ঘায়িত হয়, এবং প্রায় নয় মাস, অর্থাৎ ২৮৬ দিন তাঁদের মহাকাশ স্টেশনে থাকতে হয়।
হিলিয়াম গ্যাস নিঃসরণ এবং ইঞ্জিন বিকল হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছিল তাঁদের। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে, নাসা এবং বোয়িং কর্তৃপক্ষের মধ্যে মতভেদ সৃষ্টি হয়। শেষ পর্যন্ত নাসা সিদ্ধান্ত নেয় যে, নভোচারীরা স্পেসএক্স ক্যাপসুলে (SpaceX capsule) করে ফিরবেন।
তবে উইলিয়ামস ও উইলমোরের এই অভিযান দীর্ঘতম ছিল না। এর আগে নাসা নভোচারী ফ্রাঙ্ক রুবিও (Frank Rubio) ৩৭1 দিন মহাকাশে ছিলেন। উইলিয়ামস ও উইলমোর তাঁদের দীর্ঘ সময় ধরে মহাকাশ স্টেশনে থাকার সময়ে বৈজ্ঞানিক গবেষণা চালিয়ে যান।
তাঁরা মহাকাশে হাঁটা (spacewalks) সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছেন এবং ৯০০ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে গবেষণা করেছেন, যা মহাকাশে মানুষের জীবনযাত্রা সম্পর্কে নতুন ধারণা দিয়েছে।
এই ঘটনার পাশাপাশি, মহাকাশ গবেষণায় যুক্ত অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খবরও রয়েছে। ফায়ারফ্লাই অ্যারোস্পেসের তৈরি ব্লু ঘোস্ট (Blue Ghost) নামের একটি মহাকাশযান চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছে ১৪ দিনের সফল অভিযান সম্পন্ন করেছে।
এই যানটি চাঁদের পৃষ্ঠ সম্পর্কে গবেষণার জন্য নাসা’র তৈরি ১০টি বৈজ্ঞানিক যন্ত্র বহন করে নিয়ে গিয়েছিল। ব্লু ঘোস্ট প্রায় ১২০ গিগাবাইট ডেটা পৃথিবীতে পাঠিয়েছে, যা প্রায় ২৪,০০০ গানের সমান।
মিশন শেষে যানটি ঘোষণা করেছে যে, এটি “মনুমেন্ট মোড”-এ প্রবেশ করেছে এবং “মানবজাতির নক্ষত্রের দিকে যাত্রা পর্যবেক্ষণে” সতর্ক থাকবে।
মহাকাশ গবেষণার পাশাপাশি, বিজ্ঞানীরা আমাদের মহাবিশ্বের আরও গভীরে অনুসন্ধানে অবিরাম কাজ করে যাচ্ছেন। সম্প্রতি, জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বার্নার্ডের নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে ঘূর্ণায়মান চারটি গ্রহ আবিষ্কার করেছেন।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, সম্ভবত এই গ্রহগুলোতে বায়ুমণ্ডল, জল এবং জীবনের সম্ভাবনা নেই। তবে এই আবিষ্কার সৌরজগতের বাইরের জগৎ সম্পর্কে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
এছাড়াও, জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ (James Webb Space Telescope) এবং চিলির ALMA টেলিস্কোপ ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা একটি দূরবর্তী গ্যালাক্সিতে অক্সিজেন এবং ভারী ধাতুর সন্ধান পেয়েছেন।
এটি মহাবিশ্বের শুরুতে গ্যালাক্সি কীভাবে গঠিত হয়েছিল, সে সম্পর্কে প্রচলিত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে।
গবেষকরা আরও বলছেন, নক্ষত্রের বিস্ফোরিত হয়ে যাওয়া (supernovas) পৃথিবীর দুটি বৃহৎ গণবিলুপ্তির কারণ হতে পারে। এই ধরনের ঘটনা সম্ভবত গত ৫০০ মিলিয়ন বছরে ঘটেছে, যা পৃথিবীর ওজন স্তরকে ক্ষতিগ্রস্ত করে জীবন ধারণের ক্ষেত্রে মারাত্মক প্রভাব ফেলেছিল।
বিজ্ঞানীরা এই তত্ত্বের প্রমাণ খুঁজছেন। তাঁদের ধারণা, এই ধরনের ঘটনার চিহ্ন হয়তো প্রাচীন পাথরের মধ্যে লুকানো থাকতে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন (CNN)