নাসায় কর্মী ছাঁটাই: ‘নিষ্ঠুর’ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বিজ্ঞানীদের

নাসাতে কর্মী ছাঁটাই: ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্তের জেরে উদ্বেগে কর্মীরা।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা-য় কর্মী ছাঁটাইয়ের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের নেওয়া কিছু সিদ্ধান্তের কারণে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, যা নিয়ে সংস্থার কর্মীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে উদ্বেগ।

কর্মীদের আশঙ্কা, এর ফলে নাসার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এবং গবেষণা ব্যাহত হতে পারে।

জানা গেছে, ট্রাম্প প্রশাসনের নির্দেশে সরকারি সংস্থাগুলিতে ‘অপ্রয়োজনীয় ব্যয়, অদক্ষতা ও অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা’ দূর করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবেই নাসা-য় কর্মী ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনা করা হয়েছে।

সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা এই পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে এবং তাদের লক্ষ্য হলো কার্যক্রমকে আরও সুসংহত করা, বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে দ্বৈততা কমানো এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের গতি বৃদ্ধি করা।

গত কয়েক সপ্তাহে, অভ্যন্তরীণ একটি দল এই পরিবর্তনের কৌশল তৈরি করেছে। নাসা’র ভারপ্রাপ্ত প্রশাসক জ্যানেট পেত্রো কর্মীদের উদ্দেশ্যে পাঠানো এক ইমেইলে জানান, “আমরা আমাদের সংস্থার ভবিষ্যতের জন্য সেরা পদ্ধতি খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি।”

তিনি আরও উল্লেখ করেন, এই পরিবর্তনের ফলে প্রশাসনের নতুন অগ্রাধিকার এবং নতুন প্রশাসক নিয়োগের সম্ভাবনাও বিবেচনা করা হবে।

নাসার ইতিহাসে এই ধরনের কর্মী ছাঁটাই নতুন নয়। এর আগে, অ্যাপোলো মিশনেও এমন পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য ‘টাইগার টিম’ গঠন করা হয়েছিল।

এবারও শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের একটি দল সংস্কারের বিষয়ে কাজ করছে।

ইতিমধ্যে, গত ১০ই মার্চ বেশ কয়েকজন কর্মীকে ছাঁটাই করা হয়েছে। এর মধ্যে নীতি বিষয়ক বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ পদ এবং বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের কর্মীরাও রয়েছেন।

কর্মীদের অভিযোগ, তাঁদের সময়মতো এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়নি এবং তাঁদের প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা থেকেও বঞ্চিত করা হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মী জানান, “মনে হচ্ছে আমাদের বিশেষভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এমন নিষ্ঠুর ও নির্মম আচরণ করা হয়েছে।”

নাসার মুখপাত্র জানিয়েছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের ‘কর্মসংস্থান হ্রাসের’ (Reduction in Force বা RIF) নির্দেশের কারণে ২৩ জন কর্মীকে ছাঁটাই করা হয়েছে।

তবে, কর্মীদের অভিযোগ, তাঁদের যথেষ্ট সময় দেওয়া হয়নি এবং ক্ষতিপূরণের বিষয়েও সঠিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

এই ছাঁটাইয়ের ফলে নাসার কর্মপরিবেশে একটা উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। কর্মীদের মধ্যে অনেকেই আশঙ্কা করছেন, এর ফলে গবেষণা এবং উন্নয়নমূলক কাজগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

বিশেষ করে, বিজ্ঞান বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণেও সমস্যা হতে পারে। কারণ, বিজ্ঞান বিষয়ক নীতি নির্ধারণের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদেরও এই ছাঁটাইয়ের আওতায় আনা হয়েছে।

বর্তমানে, নাসার প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন জ্যানেট পেত্রো। তবে, নতুন প্রশাসক হিসেবে জ্যারেড আইজাকম্যানের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে এবং তিনি সিনেটে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছেন।

নাসার কর্মীদের একাংশ মনে করছেন, কর্মী ছাঁটাইয়ের ফলে সংস্থার ভবিষ্যৎ কার্যক্রমে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে।

বিশেষ করে, বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের কর্মীদের মধ্যে ‘মেধা-পাচার’ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, যা বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ গবেষণা প্রকল্পগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *