সোশ্যাল মিডিয়া থেকে মুক্তি! প্রকৃতির সান্নিধ্যে ফিরতে এখনই করুন এই কাজ

বর্তমান ডিজিটাল যুগে, আমরা যেন এক অদৃশ্য জালে আবদ্ধ হয়ে গেছি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্মার্টফোনের স্ক্রিনে চোখ রেখে, ভার্চুয়াল দুনিয়ায় বিচরণ করতে করতে, প্রকৃতির সান্নিধ্য থেকে দূরে সরে যাচ্ছি।

কিন্তু প্রকৃতির কাছাকাছি থাকা যে আমাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য কতটা জরুরি, তা হয়তো অনেকেই জানি না। তাই, আসুন, ‘টাচিং গ্রাস’-এর গুরুত্ব বুঝি, অর্থাৎ প্রকৃতির সাথে সংযোগ স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জানি।

‘টাচিং গ্রাস’ আসলে একটি রূপক অর্থে ব্যবহৃত হয়। এর অর্থ হলো, ডিজিটাল জগৎ থেকে দূরে সরে এসে প্রকৃতির কাছাকাছি যাওয়া।

খোলা আকাশে শ্বাস নেওয়া, গাছের ছায়ায় বসা, সবুজ ঘাস মাড়িয়ে হাঁটা—এগুলো সবই ‘টাচিং গ্রাস’-এর অংশ। কনকর্ডিয়া ইউনিভার্সিটি অফ এডমন্টন-এর মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং আন্তর্জাতিক ‘নেচার-মিনিং ইন লাইফ’ গবেষণা ল্যাব-এর পরিচালক ড. হলি-অ্যান পাসমোর-এর মতে, মানুষ হিসেবে আমরা প্রকৃতির প্রতি আকৃষ্ট হই, কিন্তু এর উপকারিতা সম্পর্কে অনেক সময়ই অবগত নই।

গবেষণায় দেখা গেছে, প্রকৃতির কাছাকাছি থাকলে আমাদের শরীরে রক্তচাপ ও কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে, সেইসঙ্গে ডায়াবেটিস, অ্যাজমা, হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং মৃত্যুর ঝুঁকিও হ্রাস পায়। প্রকৃতির সান্নিধ্যে স্মৃতিশক্তি, মনোযোগ এবং মন ভালো থাকে, যা সহানুভূতি ও সহযোগিতা বাড়াতে সহায়তা করে।

এমনকি, গাছপালা থেকে নির্গত কিছু রাসায়নিক উপাদান আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। ‘ফরেস্ট বাথিং’-এর মাধ্যমেও আমরা এই অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারি।

প্রকৃতির সাথে সংযোগ স্থাপনের জন্য আমাদের চারপাশে অনেক কিছুই বিদ্যমান। যারা সবসময় ঘরের মধ্যে থাকতে পছন্দ করেন, তারাও ধীরে ধীরে প্রকৃতির সাথে মিশে যেতে পারেন।

এক্ষেত্রে কিছু উপায় অবলম্বন করা যেতে পারে:

  • প্রকৃতিকে ঘরে আনুন: ঘরের মধ্যে গাছ রাখা, সমুদ্রের ছবি অথবা প্রকৃতির অন্য কোনো দৃশ্য দেখা, এমনকি ফুলের সুবাস নেওয়াও প্রকৃতির কাছাকাছি থাকার অনুভূতি দিতে পারে। প্রাকৃতিক দৃশ্য মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক।
  • রাতের আকাশ দেখুন: রাতের আকাশের দিকে তাকালে এক ধরনের প্রশান্তি আসে। এটি আমাদের শরীরের প্রদাহ কমায়, স্নায়ু শান্ত করে এবং ‘ভালোবাসার হরমোন’ অক্সিটোসিন নিঃসরণে সহায়তা করে। রাতের আকাশ আমাদের ঘুমের জন্য প্রয়োজনীয় মেলাটোনিন তৈরিতেও সাহায্য করে।
  • বাইরে ব্যায়াম করুন: বাইরে ব্যায়াম করলে শরীর ও মন দুটোই ভালো থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে, সবুজ পরিবেশে ব্যায়াম করলে ব্যায়াম করাটা সহজ ও আনন্দদায়ক মনে হয়।
  • বন্য জীবন পর্যবেক্ষণ করুন: বন্য প্রাণীদের কাজকর্ম দেখা ভালোবাসার অনুভূতি বাড়ায়। বাড়ির পাশে ফুলের বাগান তৈরি করে বা বারান্দায় পাখির খাবার রেখেও বন্য জীবনের প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টি করা যেতে পারে।

শুধু তাই নয়, সামাজিক সম্পর্ক স্থাপন এবং নতুন অভিজ্ঞতা অর্জনের ক্ষেত্রেও প্রকৃতির গুরুত্ব অপরিসীম। বন্ধুদের সাথে বাইরে ঘুরতে যাওয়া, স্থানীয় কোনো পার্কে সময় কাটানো—এগুলো মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।

বাংলাদেশে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য বিদ্যমান। সুন্দরবন, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত, রাঙ্গামাটির পাহাড়, সিলেটের চা বাগান—এসব স্থানে ভ্রমণ করে প্রকৃতির সান্নিধ্য উপভোগ করা যেতে পারে। এছাড়া, গ্রামের সবুজ-শ্যামল পরিবেশে হেঁটে বেড়ানো, নদীর তীরে সময় কাটানো, অথবা কোনো স্থানীয় উদ্যানে ঘুরতে যাওয়াও ‘টাচিং গ্রাস’-এর একটি অংশ।

সুতরাং, আসুন, ডিজিটাল দুনিয়া থেকে কিছুক্ষণের জন্য মুক্তি নিয়ে প্রকৃতির কাছাকাছি যাই। প্রকৃতির সান্নিধ্যে আমাদের শরীর ও মনকে সতেজ করি, যা আমাদের জীবনকে আরও সুন্দর করে তুলবে।

তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *