শিরোনাম: ন্যাটালি হলোওয়ের বাবা-মায়ের জীবন: মেয়ের মৃত্যুর দুই দশক পর
২০০৫ সালের ৩০শে মে, আরুবায় বন্ধুদের সাথে উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষা সফরকালে নিখোঁজ হন ন্যাটালি হলোওয়ে। এরপর কেটে গেছে দীর্ঘ ২০ বছর। এই সময়ে ন্যাটালীর বাবা-মা, বেথ হলোওয়ে এবং ডেভ হলোওয়ে, তাঁদের মেয়ের এই মর্মান্তিক ঘটনার সাথে লড়াই করেছেন। তাঁদের জীবনে নেমে আসা শোক, ন্যায়বিচারের সংগ্রাম এবং ব্যক্তিগত পরিবর্তনের এক গভীর চিত্র তুলে ধরা হলো।
নাটালি হারিয়ে যাওয়ার পর, তাঁর বাবা-মা দুজনেই মেয়েকে খুঁজে বের করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছিলেন। দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে তাঁরা এই মামলার জট খোলার চেষ্টা করেছেন। অবশেষে ২০২৩ সালের অক্টোবরে, জোরান ভ্যান ডার স্লুট নামের এক ব্যক্তি, যিনি ন্যাটালীর সাথে শেষবার ছিলেন, তাঁর হত্যার কথা স্বীকার করেন।
নাটালিকে হারানোর পর বেথ হলোওয়ে তাঁর অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ব্যক্তিগত নিরাপত্তার বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে কাজ শুরু করেন। তিনি বিভিন্ন সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন এবং একই ধরনের কষ্টের শিকার হওয়া পরিবারগুলোকে সাহায্য করেন। তিনি তাঁর মেয়ের জীবন এবং তাঁর অন্তর্ধানের ঘটনা নিয়ে একটি বইও লেখেন, যা ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। এই ঘটনার পর বেথ যেন এক নতুন মিশনে নেমেছিলেন, যা ছিল তাঁর মেয়ের স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখা এবং অন্যদের সাহায্য করা।
অন্যদিকে, ডেভ হলোওয়ে নতুন করে সংসার শুরু করেন। ১৯৯৩ সালে বেথের সাথে তাঁর বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। এরপর তিনি রবিন নামক এক নারীকে বিয়ে করেন এবং তাঁদের দুটি কন্যা সন্তান হয়। ডেভ তাঁর নাতি-নাতনিদের কাছে ফিরে শান্তি খুঁজে পান। তিনি বলেন, সময়ের সাথে সাথে শোক কিছুটা হলেও কমে আসে।
নাটালি হারিয়ে যাওয়ার সময় তাঁর ভাই ম্যাথিউর বয়স ছিল ১৬ বছর। বোনের এই আকস্মিক চলে যাওয়া তাঁর জীবনকে সম্পূর্ণ বদলে দেয়। পরবর্তীতে ম্যাথিউর সন্তান হলে বেথ এবং ডেভ আবার দাদা-দাদি হন। তাঁদের জীবনে এই নতুন অতিথি আসায় তাঁরা কিছুটা হলেও মানসিক শান্তি খুঁজে পান।
এই শোকের সময়ে বেথ, জন র্যামসে নামের এক ব্যক্তির সাথে বন্ধুত্ব গড়ে তোলেন। জন র্যামসে ছিলেন জোনবেনেট র্যামসে নামের এক নিহত শিশুর বাবা। তাঁদের মধ্যে তাঁদের সন্তানদের নিয়ে হওয়া দুঃখ এবং বিচার পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে আলোচনা হতো।
২০২৩ সালে, জোরান ভ্যান ডার স্লুট যখন ন্যাটালিকে হত্যার কথা স্বীকার করেন, তখন বেথ এবং ডেভ দুজনেই আদালতে উপস্থিত ছিলেন। বেথ বলেন, “আমার অন্তহীন দুঃস্বপ্ন অবশেষে শেষ হয়েছে।” তিনি আরও জানান, এই স্বীকারোক্তির মাধ্যমে তিনি দীর্ঘদিনের প্রশ্নের উত্তর পেয়েছেন এবং জীবনকে নতুন করে শুরু করার সাহস জুগিয়েছেন।
নাটালি হলোওয়ের এই ঘটনা তাঁদের পরিবারে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করেছে। মেয়ের শোক আজও তাঁদের হৃদয়ে বাজে। তবে তাঁরা চেষ্টা করেছেন এই শোককে জয় করে নতুন করে বাঁচতে এবং অন্যদের জন্য অনুপ্রেরণা হতে।
তথ্য সূত্র: পিপল