টোফু দিবস: পুষ্টিগুণে ভরপুর এই খাদ্য কি আমাদের খাদ্যতালিকায় জায়গা করে নিতে পারে?
আজ ১লা সেপ্টেম্বর, আর এই দিনটি বিশ্বজুড়ে ‘ন্যাশনাল টোফু ডে’ হিসেবে পালিত হয়। হয়তো অনেকেই এই নামের সাথে পরিচিত নন। টোফু, যা মূলত সয়াবিন থেকে তৈরি একটি খাদ্য, তার পুষ্টিগুণ এবং খাদ্য উপাদানের কারণে বিশ্বজুড়ে খাদ্যপ্রেমীদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।
এই বিশেষ দিনে, আসুন, টোফু সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক এবং বোঝার চেষ্টা করি, কীভাবে এটি আমাদের খাদ্যভ্যাসকে আরও উন্নত করতে পারে।
টোফু আসলে কি?
টোফু, যা বাংলায় ‘সয়াবিনের ছানা’ নামেও পরিচিত, সয়াবিনের দুধ জমাট বাঁধিয়ে তৈরি করা হয়। অনেকটা আমাদের দেশের ছানার মতোই, তবে প্রস্তুত প্রণালী এবং স্বাদে কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। টোফু দেখতে সাদাটে এবং নরম, যা বিভিন্ন ধরণের রান্নার জন্য উপযুক্ত।
টোফুর ইতিহাস:
টোফুর উৎপত্তির ইতিহাস বেশ কৌতূহলোদ্দীপক। যদিও এর সঠিক জন্মস্থান নিয়ে বিতর্ক রয়েছে, তবে চীনকে এর আদি উৎপত্তিস্থল হিসেবে ধরা হয়। প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, প্রায় ২ হাজার বছর আগে, চীনের হান রাজবংশের আমলে (৯৬৫ খ্রিস্টাব্দ) প্রথম টোফু তৈরি হয়েছিল।
অনেকে মনে করেন, কোনো চীনা রাজকুমার অমরত্ব লাভের জন্য চেষ্টা করতে গিয়ে দুর্ঘটনাবশত টোফু আবিষ্কার করেন। আবার কারও মতে, মঙ্গোলরা দুধ জমাট বাঁধার কৌশল আবিষ্কার করার পর চীনারা সয়াবিনের দুধ দিয়ে একই চেষ্টা করে সফল হয়।
চীন থেকে, বৌদ্ধ ভিক্ষুদের হাত ধরে টোফু ধীরে ধীরে জাপানে প্রবেশ করে এবং সেখানেও খাদ্য হিসেবে জনপ্রিয়তা লাভ করে। জাপানে এটি “তোফু” নামে পরিচিতি লাভ করে।
পুষ্টিগুণে ভরপুর টোফু:
টোফু শুধু একটি সুস্বাদু খাবারই নয়, এটি পুষ্টিগুণেও অনন্য। এটি প্রোটিনের একটি চমৎকার উৎস, যা পেশি গঠনে সাহায্য করে। এছাড়াও, টোফুতে রয়েছে ক্যালসিয়াম, আয়রন এবং বিভিন্ন ভিটামিন ও মিনারেল, যা শরীরের জন্য অপরিহার্য।
যারা নিরামিষভোজী, তাদের জন্য এটি একটি আদর্শ প্রোটিনের উৎস। কম ক্যালোরি এবং ফ্যাটযুক্ত হওয়ায়, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতেও এটি সহায়ক।
বিশ্বজুড়ে টোফুর ব্যবহার:
টোফু বর্তমানে সারা বিশ্বে খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন সংস্কৃতিতে, টোফুকে বিভিন্নভাবে রান্না করা হয়। এটি স্যুপ, স্ট্যু, কারি, সালাদ এবং ডেজার্ট সহ নানা পদে ব্যবহার করা হয়।
জাপানে এটি “মিসো স্যুপ”-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। চীনেও এটি বিভিন্ন ধরণের খাবারে ব্যবহৃত হয়।
টোফু এবং বাংলাদেশের খাদ্য:
আমাদের দেশে টোফু এখনো খুব পরিচিত নয়, তবে এর স্বাস্থ্য উপকারিতা এবং রান্নার বিভিন্নতার কারণে এটি ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা লাভ করছে। বর্তমানে, কিছু সুপারমার্কেট এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্মে টোফু পাওয়া যাচ্ছে।
টোফুকে কিভাবে খাদ্য তালিকায় যোগ করবেন?
যদি আপনি নতুন কিছু চেষ্টা করতে চান, তাহলে টোফু আপনার জন্য একটি ভালো বিকল্প হতে পারে। প্রথমে, টোফুর স্বাদ নিরপেক্ষ হওয়ায় রান্নার সময় মশলার ব্যবহার নিশ্চিত করুন। আপনি টোফুকে সবজির সাথে মিশিয়ে সবজি কারি তৈরি করতে পারেন, অথবা এটি দিয়ে সুস্বাদু ভাজাভুজি তৈরি করতে পারেন।
ন্যাশনাল টোফু ডে-র তাৎপর্য:
ন্যাশনাল টোফু ডে মূলত টোফুর উপকারিতা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে এবং এই খাদ্যটিকে আরও বেশি মানুষের কাছে পরিচিত করতে সাহায্য করে। এটি নতুন রেসিপি তৈরি এবং টোফু দিয়ে বিভিন্ন ধরনের খাবার তৈরির একটি সুযোগ তৈরি করে।
উপসংহার:
পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এবং বহুমুখী এই খাদ্য উপাদানটি আমাদের খাদ্যতালিকায় যোগ করার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। আপনারা যারা স্বাস্থ্য সচেতন এবং নতুন কিছু চেষ্টা করতে ভালোবাসেন, তারা অবশ্যই টোফু নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে পারেন।
তথ্য সূত্র: Travel and Leisure