শিরোনাম: আদিবাসী শিশুদের বোর্ডিং স্কুলের ভয়াবহ স্মৃতি: আমেরিকার এক অন্ধকার অধ্যায়
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আদিবাসী শিশুদের বোর্ডিং স্কুলগুলোর এক ভয়াবহ ইতিহাস উন্মোচন করেছেন লেখক মেরি আনেট পেম্বার। তাঁর নতুন বই ‘মেডিসিন রিভার’-এ তিনি তুলে ধরেছেন এই স্কুলগুলোর নির্মমতা এবং এর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব।
১৮৬০ থেকে ১৯৬০ এর দশকে আদিবাসী শিশুদের জোর করে তাদের সংস্কৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হতো। তাদের ভাষা, ঐতিহ্য এবং ধর্ম পালনের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়।
পেম্বার তাঁর মায়ের, বার্নিস রাবিডোর, অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন। বার্নিসকে অন্যান্য আদিবাসী শিশুদের সাথে উইসকনসিনের ওডানাহ-এর সেন্ট মেরিজ ক্যাথলিক বোর্ডিং স্কুলে পাঠানো হয়েছিল। সেখানে শিশুদের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হতো।
পেম্বার শৈশবে মায়ের এই কষ্টগুলো উপলব্ধি করে রান্নাঘরের নিচে বসে ছবি আঁকতেন। মায়ের সেই ‘সিস্টার্স স্কুল’-এর বিভীষিকাময় গল্পগুলো তাঁর মনে গভীর দাগ কেটেছিল।
রিচার্ড হেনরি প্র্যাট নামক এক সেনা কর্মকর্তা এই ধরনের স্কুলের ধারণার পক্ষে ছিলেন। তাঁর মতে, এই স্কুলগুলোর মূল উদ্দেশ্য ছিল ‘আদিবাসীকে হত্যা করে মানুষটিকে বাঁচানো’। আদিবাসী শিশুদের সংস্কৃতি ধ্বংস করার জন্য এই স্কুলগুলো ছিল এক গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ।
পেম্বার তাঁর বইয়ে শুধু স্কুলের ঘটনাগুলোই তুলে ধরেননি, বরং এর পেছনের বৃহত্তর প্রেক্ষাপটটিও তুলে ধরেছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন, কীভাবে এই স্কুলগুলো আদিবাসী ভূমি ও সম্পদ কেড়ে নেওয়ার একটি অংশ ছিল।
এই কাজটি সুচারুভাবে সম্পন্ন করার জন্য শিশুদের ওপর চালানো হতো চরম নির্যাতন। আদিবাসী জনগনের প্রতিরোধের ক্ষমতা দুর্বল করতে একযোগে আঘাত হানা হয়েছিল তাদের সংস্কৃতি, ভাষা ও জমির উপর।
কানাডাতেও একই ধরনের বোর্ডিং স্কুল ছিল। সম্প্রতি সেখানে গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে। এর পরেই সেখানকার সরকার এই বিষয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে।
তবে, যুক্তরাষ্ট্রে এখনো এই বিষয়ে সচেতনতা তুলনামূলকভাবে কম।
পেম্বার মনে করেন, এই স্কুলের ইতিহাস এখনো ভালোভাবে জানা হয়নি। এমনকি সরকারিভাবেও বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।
যদিও প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আদিবাসী সম্প্রদায়ের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন, তবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময়ে সরকারি সংস্থাগুলোতে কর্মী ছাঁটাই এবং বাজেট কমানোর কারণে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষার বিষয়টি আবারও হুমকির মুখে পড়েছে।
আদিবাসী সম্প্রদায়ের উপর এই বোর্ডের স্কুলগুলোর প্রভাব আজও বিদ্যমান। তাদের নিজস্ব কোনো কর ব্যবস্থা নেই, তাই তাদের উন্নয়ন ও অবকাঠামো দুর্বল।
উদাহরণস্বরূপ, পেমবারের মায়ের আদিবাসী গোষ্ঠীর লাইব্রেরিয়ান সম্প্রতি তহবিল সংকটের কারণে চাকরি হারিয়েছেন।
২০২১ সালে, একটি দ্বিদলীয় আইন ‘ট্রুথ অ্যান্ড হিলিং কমিশন অন ইন্ডিয়ান বোর্ডিং স্কুল পলিসিজ ইন দ্য ইউনাইটেড স্টেটস অ্যাক্ট’ নামে উত্থাপন করা হয়। এই আইনের মাধ্যমে হয়তো ভবিষ্যতে এই বিষয়ে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হবে।
তবে, এখনো পর্যন্ত এর কোনো সুফল পাওয়া যায়নি।
মেরি আনেট পেম্বার এই বোর্ডের স্কুলগুলোর ঘটনাগুলো জনসম্মুখে তুলে ধরার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তিনি চান, মানুষ যেন এই ভয়াবহ ইতিহাস সম্পর্কে অবগত হয়।
তিনি আর্কাইভ থেকে পাওয়া তথ্য সংগ্রহ করে দেখিয়েছেন, কীভাবে এই স্কুলগুলোতে শিশুদের নাম নথিভুক্ত করা হয়েছিল। তাঁর মতে, “এই ঘটনার জন্য ক্ষমা চাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
এটা ঘটেছিল এবং এর প্রমাণ রয়েছে।”
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান