প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে অবস্থিত একটি ক্ষুদ্র দ্বীপ রাষ্ট্র, নাউরু, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে টিকে থাকার লড়াইয়ে অর্থ সংগ্রহের এক অভিনব উপায় বের করেছে। দেশটি তাদের নাগরিকত্ব বিক্রি করার ঘোষণা দিয়েছে, যার মূল্য বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১ কোটি ১৫ লাখ টাকার বেশি (ডলারের বিনিময় হারের ওপর নির্ভরশীল)।
নাউরু, যা সলোমন দ্বীপপুঞ্জ ও মার্শাল দ্বীপপুঞ্জের মাঝে অবস্থিত, তাদের উপকূলীয় অঞ্চলগুলি জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি ও ভূমি ক্ষয়ের শিকার হচ্ছে। এছাড়াও, ফসফেট খননের কারণে দেশটির প্রায় ৮০ শতাংশ জমি বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
এই পরিস্থিতিতে সেখানকার প্রায় ১২,০০০ নাগরিককে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন। তাই, ২০২৩ সাল থেকে দেশটি এই নতুন নাগরিকত্ব প্রকল্প চালু করেছে।
নাউরুর প্রেসিডেন্ট ডেভিড অ্যাডেং জানিয়েছেন, এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য শুধু টিকে থাকা নয়, বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা। যারা এই নাগরিকত্ব কিনবেন, তারা নাউরু দ্বীপে সরাসরি বসবাস করতে পারবেন না, তবে এর বিনিময়ে তারা একটি শক্তিশালী পাসপোর্ট পাবেন, যা তাদের বিশ্বজুড়ে ভ্রমণের সুযোগ করে দেবে।
এই পাসপোর্টের মাধ্যমে ভিসা ছাড়াই বিশ্বের প্রায় ৯০টি দেশে ভ্রমণ করা যাবে, যার মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়া ও হংকংয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্যও রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্বিতীয় পাসপোর্ট থাকাটা এখন আর বিলাসিতা নয়, বরং এটি একটি কৌশলগত সম্পদ।
এটি আন্তর্জাতিক ভ্রমণের সুযোগ বৃদ্ধি করে, যা অনেকের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নাউরু সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই বছর তারা এই প্রকল্পের মাধ্যমে ৬৬ জন আবেদনকারী আশা করছেন।
তবে তাদের দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য হলো ৫০০ জন আবেদনকারীর কাছ থেকে প্রায় ৫ কোটি ২৫ লাখ ডলার সংগ্রহ করা। এই অর্থ জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে ব্যয় করা হবে।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই, নাউরুর এই পদক্ষেপ আমাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে।
এটি জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং উদ্ভাবনী পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার কথা মনে করিয়ে দেয়। তথ্য সূত্র: ট্রাভেল অ্যান্ড লেজার