আতঙ্কে ক্যান্সার ইনস্টিটিউট: ধ্বংসের মুখে চিকিৎসা গবেষণা?

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ক্যান্সার ইনস্টিটিউট (এনসিআই)-এ অচলাবস্থা, গবেষণা খাতে কাটছাঁট নিয়ে আশঙ্কা।

যুক্তরাষ্ট্রে ক্যান্সার গবেষণা ও চিকিৎসার অগ্রভাগে থাকা ন্যাশনাল ক্যান্সার ইনস্টিটিউট (এনসিআই)-এ ভয়াবহ পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। ট্রাম্প প্রশাসনের নীতিমালার কারণে এই গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা কেন্দ্রে বর্তমানে কর্মী ছাঁটাই, গবেষণা প্রকল্পের অর্থায়ন বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম পেতে বিলম্বের মতো ঘটনা ঘটছে। ফলে ক্যান্সার গবেষণার অগ্রগতি মারাত্মকভাবে ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

ক্যান্সার চিকিৎসায় কয়েক দশক ধরে এনসিআই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। কিন্তু বর্তমানে ক্লিনিসিয়ান, বিজ্ঞানী ও অন্যান্য কর্মীরা হয় চাকরি হারাচ্ছেন, না হয় হতাশ হয়ে চাকরি ছাড়ছেন। এক সময়ের শক্তিশালী এই প্রতিষ্ঠানে এখন যেন ভাঙনের সুর।

১৯৯০-এর দশক থেকে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার এক-তৃতীয়াংশ কমানো সম্ভব হয়েছে। ক্যান্সার গবেষণায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সত্ত্বেও, এনসিআই বর্তমানে ক্যান্সার প্রতিরোধের গবেষণা, উন্নত চিকিৎসা ও নতুন ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ তৈরির জন্য বরাদ্দকৃত তহবিল বন্ধ করে দিয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মচারী বলেন, “আমরা এখন নিয়মিতভাবে ‘ড্রোন হামলা’ শব্দটি ব্যবহার করি। কারণ, উপর থেকে এমনটা হচ্ছে।”

এই পরিস্থিতিতে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি মারাত্মকভাবে কমে যেতে পারে। প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ২০ লক্ষ মানুষের ক্যান্সার শনাক্ত হয়। ২০২৩ সালে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ৬ লক্ষ ১৩ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে, যা হৃদরোগের পরেই মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ। তবে আশার বিষয় হলো, ক্যান্সার চিকিৎসায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯১ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ক্যান্সারে মৃত্যুর হার ৩৪ শতাংশ কমেছে। বর্তমানে প্রায় ১ কোটি ৮০ লক্ষ ক্যান্সার রোগী সুস্থ হয়েছেন।

এই সাফল্যের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের ক্যান্সার গবেষণায় বর্ধিত বিনিয়োগকে প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন পার্ক ইনস্টিটিউট ফর ক্যান্সার ইমিউনোথেরাপির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং প্রোস্টেট ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ, ড. কারেন নুদসেন। তিনি বলেন, “আমরা জয়ী হচ্ছি। কেন আমরা এই প্রচেষ্টা বন্ধ করব, তা আমি বুঝি না।”

এই পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে এনসিআইয়ের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও হস্তক্ষেপ গবেষণা শাখার প্রধান সারা কোবরিন বলেন, “আমি সত্যিই বুঝতে পারছি না, তারা আসলে কী অর্জন করতে চাইছে। জীবন বাঁচানোর প্রচেষ্টাগুলো এখন কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। মানুষ মারা যাবে।”

এনসিআইয়ের অভ্যন্তরীণ সূত্রমতে, স্বাস্থ্য ও মানব পরিষেবা বিভাগ (এইচএইচএস) এবং সরকারি কর্মদক্ষতা বিভাগের নির্দেশে গবেষণা খাতে ব্যয় এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি কমিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর ফলে গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় মূল্যবান জৈবিক নমুনা সংরক্ষণেও সমস্যা হচ্ছে।

এনসিআইয়ের মেরিল্যান্ডে অবস্থিত গবেষণাগারে কর্মরত বিজ্ঞানীরা বলছেন, কর্মী ছাঁটাই এবং নীতি পরিবর্তনের কারণে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম পেতেও দেরি হচ্ছে। এমনকি ক্যান্সার চিকিৎসা ও রোগ নির্ণয় বিষয়ক ওয়েবসাইটেও নতুন তথ্য হালনাগাদ করা হচ্ছে না, কারণ এইচএইচএস তাদের কর্মী ছাঁটাই করেছে।

এনসিআই কর্মকর্তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, গণহারে কর্মী ছাঁটাই, সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ এবং ‘ডিইআই’ (বৈচিত্র্য, সমতা, অন্তর্ভুক্তি ও সুযোগ) বিষয়ক বিষয়গুলো নিয়ে বাইরের কারও সঙ্গে কথা বলার ক্ষেত্রে তাদের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।

এনসিআইয়ের এই সংকট দেশ ও বিশ্বজুড়ে দীর্ঘমেয়াদে প্রভাব ফেলতে পারে।

তবে, এইচএইচএস-এর মুখপাত্র অ্যান্ড্রু নিক্সন বলেছেন, এনসিআই-এর এই পরিবর্তন একটি ‘প্রয়োজনীয় রূপান্তর’। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ক্যান্সার ও অন্যান্য স্বাস্থ্য বিষয়ক গবেষণা এখনো তাদের অগ্রাধিকারের তালিকায় রয়েছে।

বর্তমানে হোয়াইট হাউস কংগ্রেসকে এনসিআই-এর বাজেট প্রায় ৪০ শতাংশ কমিয়ে ৪.৫৩ বিলিয়ন ডলারে নামিয়ে আনার প্রস্তাব দিয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাজেট কাটছাঁটের কারণে গবেষণার মান কমে যেতে পারে। কারণ, তহবিলের অভাবে ঝুঁকিহীন গবেষণাগুলোকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে, যা উদ্ভাবনী এবং যুগান্তকারী আবিষ্কারের সম্ভাবনা কমিয়ে দেবে।

ক্যান্সার গবেষণায় এই ধরনের কাটছাঁট ভবিষ্যতে রোগীদের জন্য মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *