চীনের একটি অঞ্চলে, পাথরের তৈরি কিছু হাতিয়ার খুঁজে পাওয়া গেছে, যা কয়েক হাজার বছর আগের। এই আবিষ্কারটি প্রাচীন মানব প্রজাতি নিয়ে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই হাতিয়ারগুলো সম্ভবত নিয়ান্ডারথাল মানবগোষ্ঠীর তৈরি।
চীনের ইউনান প্রদেশের লংটান অঞ্চলে খননকার্য চালানোর সময় এই পাথরের হাতিয়ারগুলো পাওয়া যায়। এই অঞ্চলে প্রায় ৬০,০০০ থেকে ৫০,০০০ বছর আগে মানুষের বসবাস ছিল।
প্রত্নতত্ত্ববিদরা বলছেন, হাতিয়ারগুলো ‘কুইনা’ শৈলীতে তৈরি করা হয়েছে। কুইনা হলো এক ধরনের বিশেষ পাথরের হাতিয়ার তৈরির পদ্ধতি, যা সাধারণত নিয়ান্ডারথালদের সঙ্গে সম্পর্কিত।
নিয়ান্ডারথালরা ইউরেশিয়া অঞ্চলে প্রায় ৪ লক্ষ বছর ধরে বসবাস করত এবং প্রায় ৪০,০০০ বছর আগে তারা বিলুপ্ত হয়ে যায়। তবে, তাদের হাড় বা কঙ্কাল সাধারণত মধ্য এশিয়ার আলtai পর্বতমালা পর্যন্ত পাওয়া গেছে।
চীনের এই অঞ্চলে কুইনা-শৈলীর হাতিয়ার আবিষ্কারের ফলে দুটি সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। প্রথমত, নিয়ান্ডারথালরা কি তাহলে এত পূর্বে, অর্থাৎ চীনেও এসেছিল? নাকি, অন্য কোনো মানব প্রজাতি, সম্ভবত ডেনিসোভানরা, এই ধরনের হাতিয়ার তৈরি করেছিল?
ইতালির ফেরারার বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গবেষক ডেভিড ডেলপিয়ানো বলেছেন, “লংটানে এই ধরনের আবিষ্কার সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি কুইনা সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পর্কিত, যা সাধারণত পরিচিত অঞ্চলের অনেক দূরে অবস্থিত।”
আবিষ্কৃত হাতিয়ারগুলোর মধ্যে ছিল চামড়া বা কাঠ কাটার জন্য ব্যবহৃত স্ক্র্যাপার, বর্শা তৈরির জন্য পাথরের তৈরি অস্ত্র এবং করাতের মতো খাঁজকাটা কিছু সরঞ্জাম।
ইউরোপে নিয়ান্ডারথালরা প্রায় ৬০,০০০ থেকে ৫০,০০০ বছর আগে শুষ্ক ও ঠান্ডা পরিবেশে বাস করত এবং তারা এই ধরনের হাতিয়ার ব্যবহার করে হরিণ, বাইসন ও ঘোড়ার মতো পশু শিকার করত।
লংটান অঞ্চলের মাটি পরীক্ষার ফলে জানা গেছে, এখানকার জলবায়ু ও পরিবেশ ইউরোপের মতোই ছিল। বিজ্ঞানীরা বলছেন, কুইনা সরঞ্জামগুলো সম্ভবত বেশি দিন ব্যবহার করার জন্য তৈরি করা হয়েছিল, কারণ তখনকার যাযাবর জীবনযাত্রায় মানুষেরা প্রায়ই এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেত।
ডেলপিয়ানো আরও বলেন, “নিয়ান্ডারথালরা হয়তো চীনের দিকে যাত্রা করেছিল অথবা তারা অন্য কোনো মানব প্রজাতির সঙ্গে মিলিত হয়েছিল। তাদের পাথরের হাতিয়ার তৈরির কৌশল হয়তো পূর্ব দিকে ছড়িয়ে পড়েছিল।”
তবে, চীনের লানঝাউ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডংজু ঝ্যাং বলেছেন, এই আবিষ্কারের উৎপাদক কারা, তা নিশ্চিতভাবে বলা কঠিন। তিনি আরও বেশি প্রমাণ, যেমন মানব জীবাশ্ম বা ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফলের অপেক্ষায় আছেন।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের স্টনি ব্রুক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জন শেয়া বলেছেন, “পাথরের হাতিয়ার তো পরিচয়পত্র নয়।”
এই আবিষ্কারটি এশিয়ায় মানবজাতির বিবর্তন নিয়ে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। গবেষকরা মনে করেন, এই অঞ্চলে আমাদের প্রজাতি, ‘হোমো সেপিয়েন্স’-এর আগমনের আগে মানব ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়গুলো লুকিয়ে থাকতে পারে।
সবশেষে, বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই আবিষ্কারের মাধ্যমে এশিয়া মহাদেশে মানব বিবর্তন গবেষণার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। ভবিষ্যতে আরও গবেষণার মাধ্যমে, এই অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রা এবং তাদের তৈরি করা হাতিয়ার সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানা যাবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন