নেব্রাস্কায় এক মর্মান্তিক ঘটনা: স্বামী কর্তৃক স্ত্রী ও দুই ছেলেকে হত্যার পর আত্মহত্যা।
যুক্তরাষ্ট্রের নেব্রাস্কা অঙ্গরাজ্যে এক হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে। জেরেমি কোচ নামের এক ব্যক্তি তার স্ত্রী এবং দুই ছেলেকে হত্যা করার পর আত্মহত্যা করেছেন।
স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম সূত্রে জানা যায়, নিহতদের মধ্যে ছিলেন জেরেমি কোচের স্ত্রী বাইলি কোচ, তাদের দুই ছেলে ১৮ বছর বয়সী হাডসন কোচ এবং ১৬ বছর বয়সী অ্যাশার কোচ।
ঘটনার কয়েক মাস আগে, বাইলি জানিয়েছিলেন যে তিনি তার স্বামীকে একবার একটি ছুরি হাতে তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছিলেন। এরপর তিনি তাকে মানসিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করতে রাজি করিয়েছিলেন।
কিন্তু বাইলির ভাষ্যমতে, চিকিৎসা ‘কাজ করেনি’। তিনি তার স্বামীর উন্নত চিকিৎসার জন্য অর্থ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে একটি অনলাইন ফান্ডিং প্ল্যাটফর্ম ‘গোফান্ডমি’-তে সাহায্যের আবেদন করেছিলেন।
স্থানীয় সূত্রে আরও জানা যায় গত শনিবার (১১ মে) সকালে জনসন লেকের একটি বাড়িতে তাদের মৃতদেহ পাওয়া যায়। পুলিশ জানায়, জেরেমির আক্রমণে সবাই নিহত হয়েছেন।
ঘটনার কয়েক দিন আগে বাইলি অনলাইনে তার স্বামীর জন্য সাহায্যের আবেদন করেছিলেন। তিনি জানান, তার স্বামী দীর্ঘদিন ধরে বিষণ্ণতায় ভুগছিলেন এবং স্থানীয় একটি হাসপাতালে ইলেক্ট্রোশক থেরাপিও (Electroconvulsive therapy) নিয়েছিলেন।
বাইলি তার ‘গোফান্ডমি’ পেজে লিখেছিলেন, “মানসিক অসুস্থতা আমার কাছ থেকে আমার স্বামীকে কেড়ে নিচ্ছে, আমি আপনাদের কাছে আকুল আবেদন করছি, দয়া করে চোখ খুলুন এবং সমাজের মানসিক স্বাস্থ্য সংকটের বাস্তবতাকে দেখুন।”
সংবাদ মাধ্যম থেকে জানা যায়, ঘটনার কয়েক দিন আগে, জেরেমিকে একটি স্থানীয় হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। বাইলি আশা করেছিলেন, তাদের বড় ছেলে হাডসন এর হাই স্কুল গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠানে জেরেমি উপস্থিত থাকতে পারবেন।
কিন্তু এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এমন ভয়ংকর ঘটনা ঘটে যায়।
বাইলি তার স্বামীর নতুন ওষুধ শুরু করার পরেও মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে জানিয়ে ‘গোফান্ডমি’ তে লিখেছিলেন, “এটাই মানসিক অসুস্থতা। উত্থান-পতন, আশা এবং হতাশার এক অবিরাম চক্র।”
স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম এবং বাইলির ফেসবুক পেজ অনুসারে, বাইলি হোল্ডরিজ পাবলিক স্কুলের একজন বিশেষ শিক্ষা শিক্ষক ছিলেন। স্কুল কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “এই দুঃখজনক ঘটনায় যারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন, তাদের প্রতি আমাদের গভীর সমবেদনা।”
বাইলি কোচের বাবা লেন কুগলার সামাজিক মাধ্যমে একটি খোলা চিঠি লিখেছেন। যেখানে তিনি উল্লেখ করেছেন, শনিবার সকালে তিনি তার মেয়ে, নাতি এবং জামাতার মৃতদেহ খুঁজে পান।
তিনি লেখেন, “যা দেখেছি, তা আমাকে সারা জীবন তাড়া করবে।” তিনি এই হত্যাকাণ্ডের জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এটি আসলে মানসিক অসুস্থতার কারণে হয়েছে।
কোজাড কমিউনিটি স্কুলও এই শোকের মুহূর্তে তাদের শোক প্রকাশ করেছে। শনিবার হাডসনের গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠানে স্কুলের সুপারিনটেনডেন্ট ড. ড্যান এন্ডর্ফ শিক্ষার্থীদের স্মরণ করিয়ে দেন যে, এই কমিউনিটি একটি বিশাল ট্র্যাজেডির শিকার হয়েছে।
তিনি শিক্ষার্থীদের তাদের প্রিয়জনদের জড়িয়ে ধরার আহ্বান জানান।
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সহায়তা বা এই ধরনের ঘটনার শিকার হলে বাংলাদেশের যে কেউ, তাদের জন্য কিছু সহায়ক নম্বর নিচে দেওয়া হলো:
- জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট: +৮৮০২৫৮৬১১১২৬
- মনের বন্ধু: +৮৮০১৩০০-৪০০০ (সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা)
যদি আপনি অথবা আপনার পরিচিত কেউ এমন পরিস্থিতির শিকার হন, তবে অনুগ্রহ করে দ্রুত সহায়তা নিন।
তথ্যসূত্র: পিপল