চাঁদের বুকে প্রথম মানব, নীল আর্মস্ট্রংয়ের পরিবারের গল্প।
নীল আর্মস্ট্রং, যিনি প্রথম মানুষ হিসেবে চাঁদে পা রেখেছিলেন, শুধু একজন নভোচারীই ছিলেন না, বরং ছিলেন এক স্নেহশীল পিতা। তাঁর তিন সন্তান—মার্ক, রিক এবং কারেন—ছোটবেলা থেকে বাবাকে ‘বাবা’ বলেই ডাকতেন। এই কিংবদন্তীর মানুষটির জীবনের বাইরে, তাঁর পরিবারের গল্পটিও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।
নীল আর্মস্ট্রং ১৯৫৬ সালে জেনেট শেরন আর্মস্ট্রংকে বিয়ে করেন এবং তাদের দাম্পত্য জীবন প্রায় ৩৮ বছর স্থায়ী ছিল। তাঁদের দুই পুত্র সন্তান ছিল: এরিক অ্যালান ‘রিক’ আর্মস্ট্রং এবং মার্ক স্টিফেন আর্মস্ট্রং। এছাড়াও, তাঁদের কারেন অ্যান আর্মস্ট্রং নামের এক কন্যা ছিল।
কিন্তু আর্মস্ট্রং পরিবারে নেমে আসে এক গভীর শোকের ছায়া। তাদের কন্যা কারেন যখন খুবই ছোট, তখন ব্রেইন টিউমারে আক্রান্ত হয়ে মাত্র দুই বছর বয়সে মারা যায়। এই মর্মান্তিক ঘটনাটি নীল আর্মস্ট্রংয়ের জীবনে গভীর প্রভাব ফেলেছিল। তাঁর কন্যাকে হারানোর শোকের পরেই তিনি মহাকাশ কর্মসূচিতে যুক্ত হন।
রিক আর্মস্ট্রং ১৯৬৯ সালে বাবার ঐতিহাসিক চন্দ্রাভিযান সরাসরি দেখেছিলেন। তিনি জানান, বাবার এই সাফল্যে তিনি গর্বিত, তবে তাঁর কাছে বাবা সবসময়ই ‘বাবা’ ছিলেন, যিনি তাঁর কাজ করতেন। রিক বর্তমানে একজন ফ্রিল্যান্স সফটওয়্যার ডেভেলপার এবং পরামর্শক হিসেবে কাজ করেন। তিনি ‘Astronaut Scholarship Foundation’-এর পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হিসেবেও কাজ করেন, যা বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত (STEM) বিষয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তা করে।
মার্ক আর্মস্ট্রং ১৯৮৬ সালে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিদ্যায় স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি সফটওয়্যার প্রকৌশলী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন এবং পরবর্তীতে বিভিন্ন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেছেন।
আর্মস্ট্রংয়ের মৃত্যুর পর তাঁর স্মৃতিচিহ্ন নিলামে তোলার ব্যবস্থা করা হয়। তাঁর ব্যবহৃত অনেক জিনিস, যেমন শৈশবের টেডি বিয়ার এবং একটি প্রি-স্কুলের রিপোর্ট কার্ডও বিক্রি করা হয়। এই নিলাম থেকে প্রায় ১৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি অর্থ সংগ্রহ করা হয়েছিল।
নীল আর্মস্ট্রংয়ের কন্যা কারেন অ্যান আর্মস্ট্রং ১৯৫৯ সালে জন্মগ্রহন করেন। কারেনকে নীল ‘মাফি’ নামে ডাকতেন। ১৯৬১ সালে কারেনের ব্রেইন টিউমার ধরা পড়ে এবং ১৯৬২ সালে মাত্র ২ বছর বয়সে তিনি মারা যান। কন্যার মৃত্যুতে নীল গভীরভাবে শোকাহত হয়েছিলেন, যা তাঁর জীবনীতে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
২০১২ সালে ৮২ বছর বয়সে নীল আর্মস্ট্রং হৃদরোগ সংক্রান্ত জটিলতায় মারা যান। তাঁর মৃত্যুর পর, তাঁর পরিবারের সদস্যরা একটি ক্ষতিপূরণ মামলার মাধ্যমে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। এই মামলার ফলস্বরূপ, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রায় ৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রদান করে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৬৩ কোটি টাকার সমান। এই অর্থ নীল আর্মস্ট্রংয়ের পুত্র, বোন, ভাই এবং নাতি-নাতনীদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়।
নীল আর্মস্ট্রংয়ের জীবন এবং তাঁর পরিবারের গল্প, একদিকে যেমন একজন মানুষের অদম্য ইচ্ছাশক্তির প্রমাণ, তেমনই পারিবারিক বন্ধন ও শোকের গভীরতাকেও তুলে ধরে। এই গল্প শুধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির জয়গান নয়, বরং মানবিক সম্পর্কের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
তথ্য সূত্র: পিপল