বদলাচ্ছে রুচি! চা-প্রিয় নেপালে কফির জোয়ার…

নেপালের গল্প: চায়ের দেশে কফির আগমন।

বহু বছর ধরে নেপালের সংস্কৃতি জুড়ে ছিল চায়ের আধিপত্য। সকালে ঘুম থেকে উঠেই “কেমন আছেন?”-এর বদলে “চা খেয়েছেন?”—এটাই ছিল সেখানকার মানুষের নিত্যদিনের অভ্যেস।

দুধ ও চিনি মেশানো গরম চা, যা সাধারণত বাটিতে পরিবেশন করা হয়, নেপালীদের জীবনযাত্রার অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে, বিশেষ করে গত কয়েক বছরে, সেই চিত্রটা ধীরে ধীরে বদলাচ্ছে।

নেপালের আনাচে-কানাচে, শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত, কফির দোকানগুলো বাড়ছে, যা এক নতুন সংস্কৃতির জন্ম দিচ্ছে।

কাঠমান্ডু শহরে ‘হিমালয়ান জাভা’ নামের একটি কফি শপ এই পরিবর্তনের অগ্রদূত। নব্বইয়ের দশকে একটি ছোট দোকান দিয়ে এর যাত্রা শুরু হয়েছিল।

বর্তমানে এটির শাখা নেপালের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে, সংখ্যাটা ৮৪। হিমালয়ান জাভার প্রতিষ্ঠাতা গাগান প্রধানের মতে, সারা দেশে প্রায় ৭,০০০ কফি শপ রয়েছে।

যদিও এখনো পর্যন্ত স্টারবাকসের মতো আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলো নেপালে প্রবেশ করেনি। গাগান প্রধান জানান, চায়ের দোকানগুলোর তুলনায় কফি শপগুলো অনেক আধুনিক।

কফি শপগুলোতে শুধু উন্নত মানের কফি তৈরির সরঞ্জামই ব্যবহার করা হয় না, সেই সাথে দোকানের সাজসজ্জা, আলো এবং পরিবেশের দিকেও বিশেষ নজর দেওয়া হয়।

যেখানে চায়ের দোকানে সাধারণত দুধ-চা বা ব্ল্যাক টি পাওয়া যায়, সেখানে কফি শপে ১০-১৫ ধরনের গরম ও ঠান্ডা কফি পাওয়া যায়।

কফি শপ ব্যবসার একটি প্রধান আকর্ষণ হলো এর কম বিনিয়োগ। একটি কফি শপ খোলা তুলনামূলকভাবে সহজ এবং এটি একটি পরিবারের পক্ষেও পরিচালনা করা সম্ভব।

এছাড়াও, কফির প্রতি গ্রাহকদের আগ্রহ বেশি থাকায়, তারা এই পানীয়ের জন্য বেশি খরচ করতেও রাজি থাকে।

নেপালের পূর্বাঞ্চলে, যেখানে চা বাগানগুলি অবস্থিত, সেখানে এখন কফির চাষও শুরু হয়েছে।

যদিও কফি এখনো নেপালের মানুষের কাছে একটি ব্যয়বহুল পানীয়, কিন্তু এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে।

হিমালয়ান জাভার এক কাপ কফির দাম প্রায় ২ ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২২০ টাকার সমান।

এই দামে কাঠমান্ডুর কোনো সাধারণ রেস্টুরেন্টে এক বেলা খাবার খাওয়া যায়, অথবা ৫ কাপ চা পান করা যেতে পারে। তবুও, কর্মব্যস্ত মানুষেরা এবং ছাত্রছাত্রীরা পড়াশোনার জন্য এই কফি শপগুলোতে ভিড় করে।

সমাজকর্মী দীপ সিং বান্দারি, যিনি নিয়মিত কফি শপে যান, তিনি বলেন, “আমার মনে হয়, নেপালে কফি খাওয়ার ধারণাটা প্রথমে এসেছিল জীবনযাত্রার মান উন্নত করার একটা উপায় হিসেবে।

কিন্তু একবার কফির স্বাদ পাওয়ার পর অনেকেই এটা নিয়মিত পান করতে শুরু করে।

নেপালে উৎপাদিত কফির পরিমাণ এখনো কম হলেও, দেশটির জাতীয় চা ও কফি উন্নয়ন বোর্ডের মতে, ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রায় ৪০০ টন কফি উৎপাদিত হয়েছে।

যেখানে একই সময়ে ২৬,০০০ টন চা উৎপাদিত হয়েছিল। তবে বোর্ড আশা করছে, কফি উৎপাদন দ্রুত বৃদ্ধি পাবে।

গাগান প্রধান আরও যোগ করেন, “নেপালের তরুণ এবং বয়স্ক—সবাই কফি ভালোবাসে।

দিন দিন কফি পানকারীর সংখ্যা বাড়ছে এবং এই প্রবণতা আরও বাড়বে।”

বর্তমানে, কফি শুধু নেপালের মানুষের কাছে একটি পানীয় নয়, বরং এটি একটি জীবনযাত্রার প্রতীক হয়ে উঠেছে।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *