নেপালের পার্বত্য অঞ্চলে পর্যটন শিল্পের প্রসারের লক্ষ্যে দেশটির সরকার একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে। দেশটির পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত কার্নালি ও সুদুরপশ্চিম প্রদেশে প্রায় ১০০টি পর্বত আরোহণের জন্য বিনামূল্যে অনুমতি প্রদানের ঘোষণা করা হয়েছে।
এই সিদ্ধান্তটি আগামী দুই আরোহণ মৌসুমে কার্যকর থাকবে। খবরটি নিশ্চিত করেছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সিএনএন।
বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এভারেস্ট জয় করতে যেখানে ১৫,০০০ মার্কিন ডলার (প্রায় ১৬ লক্ষ ৫০ হাজার বাংলাদেশি টাকা) খরচ হয়, সেখানে নেপালের এই অঞ্চলের পর্বতগুলোতে আরোহণের জন্য কোনো ফি দিতে হবে না।
এই সিদ্ধান্তের মূল উদ্দেশ্য হলো, পর্যটকদের কাছে কম পরিচিত এবং কম খরচের স্থানগুলোতে ভ্রমণের সুযোগ তৈরি করা। একইসঙ্গে, এভারেস্টের ওপর চাপ কমানোও কর্তৃপক্ষের অন্যতম লক্ষ্য।
নেপাল সরকার জানাচ্ছে, কার্নালি ও সুদুরপশ্চিম প্রদেশে এমন অনেক পর্বত রয়েছে যেগুলোর চূড়ায় এখনো পর্যন্ত কোনো মানুষ পা রাখেনি।
দেশটির পর্যটন বিভাগের এক কর্মকর্তার মতে, এই অঞ্চলের দুর্গমতা এবং দরিদ্রতার কারণে পর্বতগুলো সেভাবে পরিচিতি লাভ করতে পারেনি। এই বিনামূল্যে আরোহণের সুযোগ প্রদানের ফলে পর্বতারোহীদের মধ্যে নতুন করে আগ্রহ সৃষ্টি হবে এবং পর্যটকদের আনাগোনা বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
কার্নালি ও সুদুরপশ্চিম প্রদেশ দুটি ভারতের উত্তরাখণ্ড রাজ্য এবং চীনের তিব্বত অঞ্চলের কাছাকাছি অবস্থিত।
রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে সুদুরপশ্চিম প্রদেশের দূরত্ব প্রায় ৫৩৫ কিলোমিটার (প্রায় ৩৩০ মাইল)। আর কার্নালির দূরত্ব প্রায় ৪০০ কিলোমিটার (২৫০ মাইল)।
এই প্রদেশগুলোতে যেতে হলে রাজধানী থেকে বিমানে করে প্রায় তিন ঘণ্টা ভ্রমণ করতে হয়। তবে সেখানকার রাস্তাঘাট এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা তুলনামূলকভাবে কম।
উল্লেখ্য, নেপালের পর্যটন শিল্প দেশটির অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বর্তমানে দেশটি বছরে প্রায় ১১.৫ মিলিয়ন আন্তর্জাতিক পর্যটকদের স্বাগত জানায়।
এই শিল্পে কাজ করে দশ লক্ষাধিক নেপালী নাগরিক। তবে, এভারেস্টের চূড়ায় অতিরিক্ত ভিড় এবং আরোহীদের অনভিজ্ঞতার কারণে মাঝে মাঝে সমস্যা সৃষ্টি হয়।
তাই সরকার এখন পর্যটকদের অন্যান্য অঞ্চলে আকৃষ্ট করতে চাইছে। নতুন নিয়মানুসারে, এভারেস্ট আরোহণে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের আগে ৭,০০০ মিটারের বেশি উচ্চতার কোনো পর্বত জয় করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
নেপালের এই নতুন পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে পর্বতারোহীদের জন্য একটি দারুণ সুযোগ।
একইসঙ্গে, এটি বাংলাদেশের পর্যটকদের জন্যও নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে। বাংলাদেশের অনেক পর্বতারোহী রয়েছেন, যারা বিভিন্ন সময়ে হিমালয়ের চূড়া জয় করেছেন।
এই বিনামূল্যে আরোহণের সুযোগ তাদের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ এবং অভিজ্ঞতার দুয়ার খুলতে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন